শেখ রিদওয়ান হোসাইনঃ যখন আপনি বার বার পরাজিত হয়ে তবুও জিততেই হবে এমন ক্ষুধা নিয়ে দৌড়াবেন, তখন সেটা শুধু আর ‘জয়’ শব্দে সীমাবদ্ধ থাকে না। জয়টি হয় যায় জীবনের একটি অংশ। ঠিক তেমনিভাবে বিষয়টা লিভারপুল প্লেয়ারদের, আর ক্যাপওয়ালা জেন্টলম্যান তো বলেই দিলেন “এটিই আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ট দিন!”
পুরো সিজন জুড়েই অপ্রতিরোধ্য ছিলো লিভারপুল।লীগের ৭ ম্যাচ হাতে রেখেই টাইটেল নিজেদের করে নিয়েছিলো তারা। বাকি ছিলো শুধু আনুষ্টানিক ট্রফি উৎসব। চেলসির সাথে গোলউৎসবে মেতে উঠে সেই কাজটিও সেরে নিলো ক্লপের যোগ্য শিষ্যরা।
দর্শকবিহীন এ্যানফিল্ডে অধরা ট্রফি হাতে উল্লাস হয়তো পূর্ণতা পায় নি। তবে ‘চ্যাম্পিয়নস অব ইংল্যান্ড’ বাক্যটা এবার সকল অপূর্ণতাকে ছাপিয়ে গেছে। পুরো স্টেডিয়াম সাজানো হয়েছিলো চ্যাম্পিয়নদের সাজে। কোনো কিছুর এতটুকু কমতি ছিলো না উদযাপনে। স্টেডিয়ামের ভিতরে আসতে না পারলেও বাইরে ঠিকই মনের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলেন দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা ফ্যানরা।
ম্যানসিটিকে ২-১ গোলে চেলসি হারিয়ে দিলে, ম্যানসিটি থেকে পূর্ণ ২৩ পয়েন্ট এগিয়ে থেকেই শিরোপা নিশ্চিত করেছিলো অলরেডরা। কি অদ্ভুদ ভাগ্য চেলসির, তাদেরকেই ৫-৩ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরলো অলরেডরা।
একটু পিছনে যাওয়া যাক,তখন ২০১৭/১৮ এর প্রিমিয়ার লীগ সিজন চলছে। লিভারপুল সেই সিজনে অধরা টাইটেল জয়ে নিজেদেরকে সপে দিয়েছিলো। কিন্তু গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি সেই সিজনে নিজেদের সেরা সিজন পার করছিলো। সিটি শেষ পর্যন্ত থামলো ১০০ পয়েন্টে, আর লিভারপুল শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে করতে ৯৭ এ এসে থামলো। প্রিমিয়ার লীগে ৯৭ পয়েন্ট নিয়েও জিততে না পারার রেকর্ড এটা শুধু লিভারপুলেরই! জয়ের জন্য আগ্রাসী তবে গোছালো দল তখনই প্রমাণ দিয়েছিলো,তারা টাইটেল জয় না করে থামবার পাত্র নয়!
এই সিজনের একটি ছোটো স্ট্যাট বলে দিবে সালাহ-মানে-এলিসন-ভ্যান ডাইকরা কি খেলেছে! এ বছরের জানুয়ারির ১১ তারিখ, টট্যেনহামকে ১-০ গোলে হারিয়ে, লীগের প্রথম ২১ ম্যাচে ৬১ পয়েন্ট অর্জন করে তারা! যা টপ-৫ লীগের কেনো দলই এটি করতে পারে নি।
জয়ের দ্বারপ্রান্তে যখন লিভারপুল,তখন করোনা ভাইরাসের থাবা বসে গিয়েছিলো পৃথিবীর মানচিত্রের উপর। দিন দিন এ ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেলে লিভারপুলের ঢেরায় শঙ্কা দেখা দিয়েছিলো যদি লীগ বন্ধ হয়ে যায়! লীগ-১ও স্থগিত করে দেওয়া হলে সেই শঙ্কা দ্বিগুন হয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত ‘ক্লোজ ডোর’ অর্থ্যাৎ দর্শকশূণ্য মাঠেই বাকি সিজন খেলা হয়।
এই সিজনে অলরডেরা মন জয় করে নিয়েছে নেটিজেনদের পর্যন্ত। তাছাড়া সাবেক ও বর্তমান তারকাদের প্রশংসায় ভাসমান পুরো দল। কারণ পুরো দলটিই ছিলো একে অপরের পরিপূরক। রক্ষনভাগে আরনল্ড,এলিসন,ভ্যান ডাইক আর রবার্টসন- মধ্যমাঠে ফেবিনহো,হেন্ডারসন কেইতারা – ফরোয়ার্ডে সেরা ট্রিয়ো সালাহ-মানে-ফিরমিনো; এক কথায় পুরো দলটাই ছিলো রঙিন। আর তার কারিগর সেই বাশিঁওয়ালা- যার সুরে মুগ্ধতা ঝরে পড়ে- জুয়ের্গান ক্লপ।
এরা সবাই রবে ইতিহাস হয়ে,জেরার্ডদের অপূর্ণ স্বপ্নের পূর্ণতার নায়ক হয়ে; হার না মানা প্রতিটি স্বপ্নের শিরোনাম হয়ে-
“You’ll Never Walk Alone”