উজ্জল আহমদ
কক্সবাজারে পুলিশের ক্রসফায়ারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা, সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে টগবগে যুবক নবজাতক সন্তানের পিতা রায়হান হত্যা, রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্তৃক সহকারী পুলিশ সুপার (বি সি এস ক্যাডার) আনিসুল করিম হত্যা!
এরপর কে? এভাবে আর কত প্রাণ হারাবে, স্বজন হারানোর বেদনায় আর কত অশ্রু গড়াবে? কোন গন্তব্যে যাত্রা ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত আমার সোনার বাংলার?
প্রতিটি ঘটনার পর ফেসবুকে আপনার আমার প্রতিবাদ মাত্র কয়দিনের কিন্তু যার নাড়ি ছেড়া ধন হারিয়েছে সেই মায়ের কান্না কতকালের তা হয়তো আমরা আঁচ করতে পারিনা। যার বট বৃক্ষের মতো ছায়া পিতা হারিয়েছে কে তাকে আগলে রাখবে? একজন স্ত্রী যে তার আশা-ভরসার আবাসস্থল জীবনসঙ্গী স্বামী হারিয়েছে কে তার বোবা কান্নার আওয়াজ শুনবে?
প্রতিটি ঘটনায়ই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হচ্ছে। মানলাম বিচার হবে, হয়তো বা আসামীর ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে কিন্তু এসবের বিনিময়েও কি একটি তাজা প্রাণের মূল্য দেওয়া যাবে?
হত্যাকান্ডে যারা সম্পৃক্ত তাদের পরিবারও ভারমুক্ত নয়। এই ধরুন আকবরের কথা। আকবর রায়হান কে নির্মম ভাবে হত্যা করলো কিন্তু শুধু কি রায়হানের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো! এক সাথে কিন্তু দুটি পরিবারের সুখের অপমৃত্যু হয়ে গেলো। আকবর হয়তো তখন ক্ষমতার দম্ভে ও বাহুবলে সব ভুলে গিয়েছিল, আজ নিশ্চয় সেও অনুশোচনায় ভোগবে। রায়হান না হয় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে কিন্তু আকবর দুঃস্বহ যন্ত্রনায় ভোগবে প্রতি দিন প্রতি মুহুর্তে।
রায়হানের মা যেমন কাঁদছে আকবরের মা ও কিন্তু কাঁদছেন। হয়তো বা নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছেন। একটা কিছু ঘটলে এক জন, দুজনের ক্ষতি হয়না ক্ষতি একসাথে অনেক মানুষের। নষ্ট হয়ে যায় সাজানো সুখের সংসার।
দিন দিন কেন আমাদের এই নৈতিক অবক্ষয়? এ অবক্ষয় রোধে আমাদের করনীয় কি তাও ভাবার সময় এসেছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেমন কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরী তেমনি পারিবারিক সচেতনতা ও সামাজিক অনুশাসনের দিকেও মনযোগী হওয়া জরুরী।
লেখকঃ মালয়েশিয়া প্রবাসী
সিএনবাংলা/এনএএ