Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
জ্ঞান ফিরেছে ইউএনও ওয়াহিদার, যুবলীগ নেতাসহ তিনজন আটক – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জ্ঞান ফিরেছে ইউএনও ওয়াহিদার, যুবলীগ নেতাসহ তিনজন আটক

সিএনবাংলা ডেস্ক :: অস্ত্রোপচারের পর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের পুরোপুরি জ্ঞান ফিরে এসেছে। তার সিটিস্ক্যান রিপোর্ট ভালো। চিকিৎসক ও তার স্বামীর সঙ্গে কথাও বলেছেন। তবে জীবনের শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স বিভাগের নিউরোট্রমা বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদ হাসান। মস্তিষ্কে জটিল অপারেশন পরিচালনাকারী ডা. জাহিদ হাসান গতকাল এসব তথ্য দিয়ে বলেন, ৭২ ঘণ্টা পার হলে অনেকটাই হয়তো শঙ্কামুক্ত বলা যাবে।

এদিকে রাতের আঁধারে সরকারি বাসায় ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় তিন যুবলীগ নেতাসহ আটক ছয়জনের মধ্যে তিনজন জড়িত বলে র‌্যাব জানিয়েছে। জেরার মুখে এই তিনজন বলেছেন, চুরির উদ্দেশ্যেই তারা ইউএনওর বাসায় রাতের আঁধারে প্রবেশ করেন। চুরিতে বাধা দেওয়ায় ইউএনও এবং তার বাবার ওপর তারা হামলা চালায়। এরা হলেন ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও ঘোড়াঘাটের ওসমানপুরের সাগরপুর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলাম (৩৫), রং মিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম (৩৫) এবং সান্টু চন্দ্র দাস (২৮)।

র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রং মিস্ত্রি নবীরুল ইসলামের পরিকল্পনাতে তারা চুরির জন্য ওই বাসায় প্রবেশ করেন। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা এও বলেন, এটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দাবি করেছেন। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। তবে এ ঘটনায় আটক উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীর আলমকে (৪২) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা রেজা আহমেদ ফেরদৌস জানান, হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসার পেছন দিকে মই দিয়ে উঠে দুর্বৃত্তরা ভেন্টিলেটর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। হাতুড়ি নিয়ে প্রথমেই তারা ঢুকে যান ওয়াহিদা খানমের বেডরুমে। সেখানে অতর্কিত হামলা চালায় ওয়াহিদা খানমের ওপর। মেয়ের চিৎকারে পাশের রুমে থাকা বৃদ্ধ বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ (৭০) ছুটে এলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। তারা অচেতন হয়ে পড়ে থাকলে মৃত ভেবে হামলাকারীরা চলে যায়। এর আগে বাসভবনের প্রহরীকে একটি ঘরে আটকে রাখে দুর্বৃত্তরা। পরে বৃহস্পতিবার সকালে মারাত্মক আহত অবস্থায় ওয়াহিদা খানম ও তার বাবাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেদিনই দুপুরে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়। সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। পৈশাচিক কায়দায় ইউএনওর ওপর এমন নজিরবিহীন হামলার ঘটনাটি জানাজানি হলে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। হামলাকারীদের গ্রেফতারে দাবি ওঠে সর্বমহল থেকে। সারা দেশে ইউএনওর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ হামলার পর সারা দেশে ইউএনওদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজ বাসভবনে গতকাল বলেন, ‘হামলাকারীরা যে দলের কিংবা যে মতেরই হোক, তারা ঘৃণ্য অপরাধী। বর্বরোচিত এ হামলার দায় থেকে অপরাধীরা ছাড় পাবে না। সরকার অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এ অবস্থায় ভিডিও ফুটেজ হাতে নিয়ে হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দারা একযোগে মাঠে নামে। ঘটনার পরই হামলায় জড়িত যুবলীগের কয়েকজন নেতার নাম উঠে আসে। বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম (৪২) এবং উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল ইসলাম (৩৫)। গ্রেফতারের পর পরই তাদের যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া আটক হয় আরও চারজন।

‘ওয়াহিদা খানমের সিটিস্ক্যান ফলাফল খুব ভালো, তবে শঙ্কামুক্ত নন’ : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স বিভাগের নিউরোট্রমা বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদ হাসান গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, ওয়াহিদা খানমের সিটিস্ক্যান ফলাফল খুব ভালো, এক্সিলেন্ট, অপারেশন সাকসেসফুল। তবে এখনো তিনি শঙ্কামুক্ত নন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার আগে তার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। প্রেসার চেক করে অবস্থা স্বাভাবিক পেয়ে তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এরও আগে চিকিৎসকরা জানান, ওয়াহিদার মাথার বাঁ দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথার কিছু অংশ ভেঙে মস্তিষ্কে প্রেসার তৈরি করছে। সেটি অপসারণ করা গেলে অবস্থার উন্নতি হবে এমন আশা থেকে তার অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়। জাহিদ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত তার সব প্যারামিটার খুবই ভালো। সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট কেমন আসে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। তবে ভালো খবর, তার সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট শতভাগ ভালো এসেছে। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে তিনি এখন ভালো আছেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওনার জ্ঞান পুরোমাত্রায় আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনার মাথায় নয়টি আঘাত ছিল। আমরা ঠিকঠাক করে দিয়েছি। শরীরের এক পাশ অবশ আছে, সে অবস্থা থেকে মুক্ত হতে সময় লাগবে বলেও জানান মেডিকেল বোর্ড প্রধান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ওয়াহিদার মাথায় ভাঙা হাড়ের সাত-আটটা টুকরা ছিল, সেগুলো আমরা জোড়া দিয়েছি। জোড়া দিয়ে হাড়গুলোকে জায়গামতো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে আরও ছোট ছোট কাটা ছিল, সবগুলোকেও রিপেয়ার করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনার ডান পাশটা যে অবশ ছিল, প্যারালাইজড ছিল। আশা করি সেটা রিভার্স হয়ে যাবে, সচল হয়ে যাবে। তবে কিছুদিন সময় লাগবে।

চুরির উদ্দেশ্যেই হামলা! : ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখকে হাতুড়িপেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলার ঘটনায় তিনজন দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। শুক্রবার রাতে রংপুর র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস। গ্রেফতার তিনজন হলেন ঘোড়াঘাট উপজেলার যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সদস্য আসাদুল ইসলাম, রং মিস্ত্রি সান্টু চন্দ্র দাস ও রং মিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃতরা চুরির উদ্দেশ্যে হামলা করেছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। তবে এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক (সদ্য বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীর আলমকে (৪২) জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। র‌্যাব জানায়, আসাদুলকে বাংলা হিলি এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর তার জবানবন্দি অনুযায়ী রং মিস্ত্রি নবীরুল ও মিস্ত্রি সান্টু চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করা হয়। সিসি টিভি ফুটেজের সূত্র ধরে পরে আসামিদের ব্যবহৃত চুন মাখা একটি লাল টি শার্ট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অন্যান্য মালামাল সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। র‌্যাব জানায়, আসাদুল দাবি করেছে চুরির উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়। মূল হামলাকারী ছিলেন নবীরুল। নবীরুল টিএনওকে হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। সান্টু দাস তাদের সহযোগিতা করেন। ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে র‌্যাব ছয়জনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরসহ অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে র‌্যাব জানায়। বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সরকারি বাসভবনে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী। ভবনের দোতলার ভেন্টিলেটর ভেঙে এই ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে দিনাজপুর-৬ (হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট) আসনের এমপি শিবলী সাদিক দাবি করেছেন, ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমের ছত্রছায়ায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার সব কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। এ ঘটনায় ‘আসাদুল, জাহাঙ্গীর ও আরও একজন গ্রেফতার হয়েছেন। আটককৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এমপি শিবলী সাদিক।’ এমপি শিবলী সাদিক মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আটক ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও সদস্য আসাদুল হক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদকের বিস্তারের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। এ কারণে তাদের দল থেকে বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি আড়াই থেকে তিন মাস আগে জেলা যুবলীগকে জানাই। স্থানীয় নেতাদের ও সেন্ট্রালে একাধিকবার জানাই। স্থানীয় পর্যায় থেকেও জেলা কমিটিকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত চিঠির কোনো উত্তর আসেনি। এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, দেশবাসীসহ সেটা আমারও প্রশ্ন, আমিও জানতে চাই।

দ্রুত বিচারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাবা-মা : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার আহত টিএনও ওয়াহিদা খানমের বাবা-মা ও ভাই অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শুক্রবার দুপুরে রমেক হাসপাতালের ১ নম্বর ভিআইপি কেবিনে তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা এ দাবি জানান। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১ নম্বর ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী রমিছা বেগম ছেলে শেখ শরিফ।

ঢাবিতে ছাত্র ফেডারেশনের বিক্ষোভ : দিনাজপুরে ইউএনও ওয়াহিদা খানম এবং মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। বর্বরোচিত ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান খান রিচার্ড। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সুত্র: বিডি প্রতিদিন
সিএনবাংলা/জীবন

Sharing is caring!

 

 

shares