সিএনবাংলা ডেস্ক :: তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব, সেই সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। বর্তমানে শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনসহ সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়।
অফিস-আদালত, ব্যাংক থেকে শুরু করে সুপারশপ এমনকি পাড়ার মুদি দোকানেও দেখা যায় প্রযুক্তির ব্যবহার। কর্মক্ষেত্রে সফলতা পেতে হলেও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে আজকের আয়োজন, যেগুলো জানা থাকলে কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব হবে আরও সহজ ও অন্যদের থেকে আলাদা। লিখেছেন-
মাইক্রোসফট অফিস
শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয় বরং চাকরিতে ঢোকার আগেই মাইক্রোসফট অফিসের প্রয়োজনীয়তা শুরু হয়। চাকরিতে ঢোকার আগে নিজের সিভি তৈরি করে জমা দিতে হয়।
একটি সুন্দর গোছান সিভি চাকরি প্রার্থীর জন্য চাকরিটি পেতে সহায়ক হয়। মাইক্রোসফট অফিস জানা থাকলে বাসায় বসে নিজের ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকেই তথ্যবহুল একটি সিভি বানিয়ে নিতে পারেন। লেখালেখির কাজের জন্য এর চেয়ে উন্নত এবং সহজ সফটওয়্যার আর হয় না। কারণ অফিসিয়াল প্রত্যেকটি কাজে মাইক্রোসফট অফিস প্রয়োজন হবে।
তাছাড়া সাধারণ চিঠিপত্র থেকে হিসাব-নিকাশ কিংবা কোনো বিষয়ের ওপর প্রেজেন্টেশন দেয়া প্রায় সব অফিসেই প্রয়োজন পড়ে। আর এসব কাজে ব্যবহার করতে হয় মাইক্রোসফট অফিসের ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্টের মতো সফটওয়্যার। বিশ্বের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহার করে থাকে।
বাংলা ও ইংরেজি টাইপিং
ব্যক্তিগত এবং অফিস কিংবা অ্যাসাইনমেন্টের প্রয়োজনে ইংরেজিতে প্রতি মিনিটে ৪০টি শব্দ এবং বাংলা ২৫টি শব্দ টাইপ করতে পারতেই হবে। শিক্ষার্থীদের প্রায় বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়। তারা যদি নিজেরাই টাইপ করতে পারে, তাহলে দোকানে গিয়ে টাইপ করতে হবে না। অর্থ ও সময় দুটিই বেঁচে যাবে।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন কাজে বাংলায় লেখালেখি করতে হয়। বর্তমানে বাংলায় লেখার জন্য জনপ্রিয় দুটি সফটওয়্যার হল বিজয় ও অভ্র। অভ্র ওপেন সোর্স ও ফোনেটিক টাইপিং সুবিধার কারণে অনেকেই আজকাল এটি ব্যবহার করছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই আবার শুধু বিজয় ব্যবহার করে থাকে। যে কোনো একটি ব্যবহার করেই লেখা সম্ভব হলেও দুটিই শিখে রাখা ভালো।
অ্যাডভান্সড সার্চ, রিসার্চ
সার্চ অর্থ অনুসন্ধান করার বিশেষ উপায় হল নির্দিষ্ট জিনিস বা বিষয়টি নির্দিষ্ট করে খুঁজে বের করা। আবার বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে কোনো বিষয় সার্চ দিয়ে তা নোট করাকেই রিসার্চ বলে। যেমন : কেন এটি হয়? কী জন্য হয়? এটি হলে লাভ কী? রিসার্চ মানে এই না যে, শুধুই অ্যাসাইনমেন্টের জন্য ডাটা কালেক্ট করা। রিসার্চ অর্থ সত্য উদ্ঘাটন করাও বটে।
রিসার্চ তখনই প্রয়োজন, যখন কেউ কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজে। কোনো প্রজেক্ট তৈরি করার জন্যও রিসার্চ করতে হয়। গুগল সার্চ মোটামুটি সবাই জানলেও গুগলের লক্ষ-কোটি ফলাফল থেকে কাক্সিক্ষত তথ্য খুঁজে পেতে অনেকেরই সমস্যা হয়ে থাকে। গুগলের অ্যাডভান্স সার্চের ওপর দক্ষতা থাকলে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ই-মেইলের খুঁটিনাটি
বর্তমান সময়ে যার কাছেই স্মার্টফোন আছে তারই একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস থাকবে এটা বাধ্যতামূলক। কেননা ই-মেইল না থাকলে স্মার্টফোনের অ্যাপস এমনকি অনেক হালনাগাদ সার্ভিস পাওয়া যায় না। এছাড়াও চাকরির সিভি জমা দেয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজে ই-মেইল ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত সময়ে যে কোনো ডাটা ট্রান্সফার এমনকি প্রয়োজনীয় বিশেষ কোনো ডকুমেন্টস ই-মেইলে আদান-প্রদান করা যায়। পেশাগত প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত ই-মেইল আদান-প্রদান করতে হয়।
এক্ষেত্রে ছোটখাটো ভুল অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ভালোভাবে ই-মেইল লেখা তাই সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ই-মেইল ফরম্যাটিং, ফাইল এটাচমেন্ট, সিসি, বিসিসি, সিগনেচারসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানা থাকলে সহজ এবং সাবলীলভাবে তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব।
ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট
গাণিতিক যে কোনো সমস্যা কিংবা কোনো হিসাব-নিকাশের কথা এলেই মাথায় আসে মাইক্রোসফট এক্সেলের নাম। মাইক্রোসফট এক্সেল মূলত এক ধরনের স্প্রেডশিট। সেখানে বিভিন্ন ধরনের টেবিলের মাধ্যমে কোনোকিছুর পরিসংখ্যান দেখান হয়। যেমন- শেয়ারবাজারের সূচক, অফিসের কর্মীদের কাজে আসার সময়সূচি, শিক্ষার্থীদের মার্কশিট ইত্যাদি। মাইক্রোসফট এক্সেলের দক্ষতা থাকলে খুব সহজেই ডাটা এন্ট্রির কাজও করা যায়।
প্রেজেন্টেশনে দক্ষতা
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে কর্পোরেট জীবনের শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া, প্রতিযোগিতা বা আরও নানা কাজে প্রেজেন্টেশন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। ভালো প্রেজেন্টেশন দেয়ার কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারলে শিক্ষাজীবন এমনকি কর্মক্ষেত্রে পথচলা হতে পারে আরও গৌরবোজ্জ্বল। প্রোজেক্ট ডিসপ্লে এবং প্রেজেন্টেশন তৈরি করার ক্ষেত্রে দুটি সফটওয়্যার আমাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে, তা হল- গুগল স্লাইড এবং মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট। এ দুটি সফটওয়্যার প্রায় একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলেও এদের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টে রয়েছে অসংখ্য টুলস, যার মাধ্যমে খুব সহজেই প্রেজেন্টেশনকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। দুটিতেই রয়েছে অসংখ্য স্লাইড তৈরি করার অপশন। সেই সঙ্গে ছবি অ্যাটাচ করা যায়, মিউজিক অ্যাড করা যায়, থিম পাল্টান যায়, ফন্ট চেঞ্জ করার পাশাপাশি এর কালার ও সাইজেও পরিবর্তন আনা যায়।
কমিউনিকেশন টুলস ও ওয়েবিনার
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বর্তমানে অফিসের মিটিং, অনলাইন ক্লাস এমনকি সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রেস মিটও হয় ওয়েবিনারে। তাছাড়া হোম অফিস করার ক্ষেত্রে এসব অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কমিউনিকেশন টুলস ও ওয়েবিনার প্লাটফর্ম ব্যবহৃত হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ কল, ভাইবার, জুম ভিডিও কনফারেন্সিং, গুগল মিট, সিসকো ওয়েবএক্স, ওয়েবিনারসহ জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জানা থাকলে কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। কর্মক্ষেত্রে কমিউনিকেশন আরও উন্নত সহজ করার ক্ষেত্রে এ প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার জেনে রাখা জরুরি।
হার্ডওয়্যার ও ট্রাবলশুটিং
ডিজিটাল বিপ্লবের এ সময়ে প্রায় বাসায় এবং প্রতিটি অফিসেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ক্যামেরা, ফটোকপিয়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব হার্ডওয়্যারের ব্যবহার জানা থাকলে নিজের কাজ নিজেই করতে পারবেন। আর ছোটখাটো ট্রাবলশুটিং জানা থাকলে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিজেই ঠিক করে ফেলা যায়। এক্ষেত্রে মিস্ত্রির জন্য অপেক্ষায় থেকে কাজের সময় নষ্ট করতে হবে না। কম্পিউটার বা ফোনের কোনো পার্টস নষ্ট হয়ে গেলে সেটি ঠিক করার অন্তত বেসিক উপায়টা শেখা জরুরি। এছাড়াও র?্যাম, হার্ডডিস্ক, বেসিক ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস সম্পর্কেও ধারণা রাখা প্রয়োজন। এসব টুকটাক কাজ নিজেরা জানলে দোকানে ছোটা লাগবে না।
সোশ্যাল মিডিয়া স্কিল
আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুবই সরব ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলো সব সময় মানুষের চেয়েও বেশি অ্যাক্টিভ থাকে। তাই যে কোনো বিষয়ে আপডেট থাকতে মাধ্যমগুলোতে নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখা জরুরি। অন্তত যে কোনো খবর সবার আগে পেতে ফেসবুক টুইটারের দ্বারস্থ হতে হয়।
তাছাড়া সামাজিক মাধ্যম থেকে যোগাযোগ বাড়ানোও যেতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহারের স্কিল এবং মেথডগুলো জানা জরুরি। তবে সেটি যেন আশক্তির পর্যায়ে চলে না যায়।
সিএনবাংলা/জীবন