Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
কেন এমন করলাম – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কেন এমন করলাম

কিন্তু কেন এমনটি করেছিলাম তার কোনো সঠিক জবাব দিতে পারবো না। আঠারো বছর বয়স পেড়োনো কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক দুরন্ত তরুণ বন্ধুরা বোধহয় এমনই হয়। তারা অন্যের ক্ষতি করে না। তবে তারা হঠাৎ মিলে যায় যখন-তখন যেকোনো স্থানে আড্ডায়। ওই সময়ে তারা মজে নিজেদের মাঝে উশৃংখল মজায় আর সীমাহীন দূরন্তপনায়। তারা অনেকে মিলে গিয়ে অপ্রত্যাশিত অনেক কিছুই করে ফেলে। কেন তারা এমনটি করতে গেল, তাদের কাছে এমন প্রশ্ন করা কেবলই অভিভাবকদের বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। হ্যাঁ, এমনই হয়।

আমাদের ছোটোবেলায় একদিন আমরা কয়েক বন্ধু মিলেছি শহরের উকিল পাড়া পয়েন্টে। সময়টা এমন নয় যে বিকেলের স্বাভাবিক বন্ধুদের আড্ডা ; বরং গ্রীষ্মের ভর দুপুর। পয়েন্টের কোনো এক চা স্টলে ঢুকে সিঙ্গারা একটি নিয়ে দুই জনে ভাগ করে খাওয়া , আবার এক কাপ চা একই কাপে চুমুক দিয়ে তিনজনে খাওয়া শেষে হাঁটতে থাকি উদ্দেশ্য হীন গন্তব্যে। সেদিন এক ধূমপায়ী বন্ধু একটি সিগারেট ধরিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে টানছিলো যাতে কোনো সিনিয়র সিটিজেন দেখে না ফেলেন। তার দেখাদেখি আরও চার পাঁচজন শখের বশে ওই ধূমপায়ী বন্ধুর হাত থেকে নিয়ে ওই একটি-ই একদম করে টেনেছিলো। আমরা হেঁটে যাচ্ছি একসাথে নয়জন। সময়টা দুপুরবেলা এবং সেদিন ছিলো ছুটির দিন। তাই রাস্তায় লোকজন কম এবং রিক্সার দেখাও হঠাৎ একটা বা দুইটা মিলছে। যাচ্ছি সুনামগঞ্জ শহরের উকিল পাড়া পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের দৃষ্টি নন্দন স্মার্ট মাছ শিকারী পাখি বকের তিনটি ভাস্কর্য স্থাপিত নান্দনিক ‘বক পয়েন্টে’ র দিকে। বক পয়েন্টের ঠিক উত্তর-পশ্চিম কোণে অর্থাৎ যা বায়ুকোণ সেদিকে শহরের তরুণদের কাছে অতি আকর্ষণীয় গার্লস স্কুলের অবস্থান। তখন রাস্তা থেকে প্রথমে নজরে আসতো একটি হাজামজা পুকুর আর পুকুরের ওই পাড়ে গার্লস স্কুল। পুকুরটি ওই এলাকার পরিবেশকে সুশীতল রাখতো সবসময়। কচুরিপানার ফুল ফুটলে তা দেখে পথচারীদের চোখ জুড়াতো। মাঝে মাঝে এখানে ডাহুক ডাহুকী আসতো। দুর্ভাগ্যজনক হলো পরিবেশ বান্ধব এই পুকুরটি কারা যেনো নির্মম ভাবে বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছেন। আমার কাছে মনেহয় পরিবেশের একটি অতি উপকারী অঙ্গ কেটে ফেলা হলো। যাই হোক এসব দেখা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ। আমি চলে যাচ্ছি নয় তরুণের বেখেয়ালি আড্ডায়। নানান কথা বলতে বলতে আমরা তখন ওই হাজামজা পুকুরের কাছে আসতেই বন্ধু আশরাফ আমাকে কানের কাছে মুখ এনে বললো আয় বাপ্পাকে ওই পুকুরে ফেলে দিই। বাপ্পা ছিলো খুব চালাক।হয়তো বুঝে গিয়েছিলো, তাই যেই-না আমি তাকে ধাক্কা দিয়েছি সেও আমাকে শার্ট ধরে টেনে রেখেছিলো। ঘটনা যা ঘটলো, শেষ পর্যন্ত দুইজন একসাথে ওই কচুরিপানা ভরা পুকুরে পড়ে যাই। অবশ্য আশরাফও রক্ষা পায়নি, অমল চৌধুরী আর সত্যচয়ন মিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আমাদের পাশে। তারপর ওরা সবাই দৌড়ে চলে যায় পয়েন্টের একমাত্র হারান কাকার দোকানের বারান্দায়। আমরাও তখন আনুমানিক দশবছরের পঁচা কচুরিপানা থেকে উঠে অপরাধী ভাব নিয়ে ডানে-বামে তাকাতে তাকাতে গিয়ে মিলে যাই দীপঙ্কর, সত্যচয়ন ও অন্যদের সাথে ওই দোকানের বারান্দায়। ওইসময় দোকান বন্ধ ছিলো। তাই দোকানের ভিতরে ও সামনে আর কোনো লোকজন নাই। এদিকে অমল চৌধুরীর বাসা কাছেই, তাই সে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। অভিজিৎ আর বাপ্পার বাসাও খুব বেশি দূরে নয়। ওরাও কোনো কথা না বলে যার যার পথে চলে গেছে। কিন্তু আমরা যারা একটু দূরের তারাই থেমেছি। এখন আর কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। এদিকে প্যান্ট-শার্ট ময়লা পানিতে ভিজে গেছে। কি বিশ্রী গন্ধ। প্যান্টের ভিতরে চুলকানি শুরু হয়ে গেছে। ভয় পাচ্ছি জোঁক ধরলো কি-না। আমরা একেকজন একেক মহল্লা থেকে এসে মিলেছি। এই ভিজা আর নোংরা লাগানো কাপড়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে যে কেউ নিশ্চিত পাগল মনে করে তাড়া করতে পারে। এদিকে আবার আমার পায়ের জুতো পুকুরের কাদায় আটকে গেছে। তাই খালি পা। কি করবো বুঝতে পারছি না।

দোকানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছি সামনে গার্লস স্কুল। প্যান্টের ভিতর, শার্টের ভিতর চুলকানি আরো বেড়েছে। প্যান্টের উপরে হাতের আঙুল দিয়ে ঘষে ঘষে কাল্পনিক জোঁক ছোটানোর চেষ্টা করছি। ভাবছি, নিশ্চিত প্যান্টের ভিতরে জোঁকে ধরেছে। কিন্তু এখানে কিছুই করার উপায় নাই। মনেমনে বলছি, ভাগ্যিস আজকে স্কুল বন্ধ। না হলে কি কেলেংকারী না হয়ে যেতো। নিশ্চয়ই মেয়েরা জানালা দিয়ে দেখে হাসতো আর এই ঘটনা রটে যেতো সারা শহরে। এমন সময় একটি রিক্সা পেয়ে যাই। এই এক রিক্সায় চড়েই আমি আর আশরাফ যাচ্ছি। কেউ কোনো কথা বলছি না। অবশ্য বিকেলেই আবার মিলেছি অন্য কোনোখানে। তবে সেই সময়কে খুব মনে পড়ে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন উৎসবে পরিবারের সদস্যদের কাছে গল্প করি। গল্পটি শুনে এ প্রজন্মের তরুণরা বলে, কি দারুন সময় কাটিয়েছেন আপনারা। একজন-তো বলেই ফেললো তখন যদি এখনকার মতো মোবাইল ফোন আর ক্যামেরা থাকতো, তাহলে নিশ্চিত এই ঘটনা কেউ ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দিতো, আর তা ভাইরাল হয়ে যেতো।

প্রিয় পাঠক ত্রিশ বছর আগের ওই দুরন্তপনা স্মরণ করে খুব উপভোগ করি। সেই চঞ্চলতা ও দুরন্ত সময় কোথায় যেনো চলে গেছে। মনের জানালা খুলে খুঁজি, কোথায় সেই তারুণ্য ! তবে সত্যি বলতে কি আমি কিন্তু আজ-ও জানি না সেদিন কেন এমন করলাম।।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ আব্দুল হক

Sharing is caring!

 

 

shares