Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
আজমিরী দরবারশরীফ ও আজমিরীগঞ্জ নামের ইতিকথা – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আজমিরী দরবারশরীফ ও আজমিরীগঞ্জ নামের ইতিকথা

শাহ আলম চৌধুরী

“ভাটি অঞ্চলের রাজধানী” হিসেবে খ্যাত আজমিরীগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এই উপজেলাকে ঘিরে রয়েছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য উপজেলা। এর উত্তরে শাল্লা উপজেলা, পূর্বে ও দক্ষিণে বানিয়াচং উপজেলা এবং পশ্চিমে ইটনা উপজেলা। হাওর বেষ্টিত ভাটি বাংলার এই জনপদ যার পশ্চিম পাশ ঘেষে বয়ে গেছে সুরমা-কুশিয়ারার মিলিত স্রোত কালনি-কুশিয়ারা- ভেড়ামোহনা। আজমিরীগঞ্জ মূলত ভেড়ামোহনা নদীর তীরে অবস্হিত l ১৯০৭ সালে আসাম সরকারের অধীনে আজমিরীগঞ্জ থানায় পরিণত হয়। ১৯৮৩ সালে আজমিরীগঞ্জ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। শহরটিতে বেশ কয়েকটি কাঠামোগত সুন্দর বাড়ি রয়েছে, যা ১৮০০ সালের আগে থেকেই ছিল, ত্রিপুরার মহারাজা দ্বারা এইগুলির অর্থায়ন করা হয়েছিল। এই উপজেলার জলসুখাতে রয়েছে অনেক জমিদার বাড়ি। যার ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়েছে। গোপীনাথ আখড়াকে কেন্দ্র করে এই উপজেলা থেকেই ঘাটুগানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে সিলেটের ইতিবৃত্ত গ্রন্থ থেকে জানা যায়।

উপমহাদেশের বিশ্ববিখ্যাত সুফী সাধক সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী আজমিরী (রহ:) র সুযোগ্য প্রতিনিধি কুতুবে রব্বানী হযরত শাহ সুফী আলহাজ্ব হাফিজ খাজা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক চিশতী (রহ:) প্রায় দেড় শতাব্দী পূর্বে আজমির শরীফের প্রতিনিধি হিসাবে এ প্রাচীন জনপদে পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারের লক্ষে সুদূর ভারত হতে হিজরত করে তশরীফ এনেছিলেন। তখনও উনার আদিনিবাস ছিল কলকাতায় এবং ঐ সময় কলকাতায় প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল এবং মুসলমানদের উগ্র হিন্দুত্ববাদিরা নির্যাতন করতে শুরু করলে এদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।

এর অনেক পরে উনার আস্তানা ছিল শাল্লা গ্রামে আমাদের বাড়িতে এবং আমার দাদী উনার প্রধান ভক্ত ও মুরিদ ছিল এবং এই গ্রামে আরও অনেকই উনার ভক্ত ছিল এবং পরবর্তীতে আমার বড় বাবা পীর সাহবের কথায় শাল্লা মসজিদ তৈরি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু এলাকার লোকজনের সম্মতি না পাওয়ায় তা হয়ে উঠেনি l এলাকাবাসীর ইচ্ছা ছিল গ্রামের সবাই মিলে মসজিদটি নির্মান করবে এবং পরবর্তীতে এলাকাবাসী মিলে মসজিদটি নির্মান করেন। নির্মান শেষে এলাকাবাসী মসজিদের বারান্দা নির্মানের জন্য আমার বড় বাবাকে অনুমতি দিলেন এবং তা তিনি নিজ অর্থায়নে সম্পাদন করেন l এর ও অনেক আগে পীর সাহেবের কথায় আমার বড় বাবা নিজ অর্থায়নে কলকাতা ৯৮ রোড সিন্ধুরাপট্টি একটি বিশাল আকারের মসজিদ ও পুকুর নির্মান করেন যা অধ্যবদি এখনও আছে l মসজিদটি যখন তিনি নির্মান করেন তখন তিনি কলকাতায় ব্যবসা করতেন এবং তাঁর ব্যবসা ছিল তখন রমরমা এবং পীরসাহেবের ২য় আস্তানা ছিল আজমিরীগঞ্জ শরীফ নগরে এবং শরীফ নগরে উনার ভক্তের সংখ্যা ছিল বেশি l তিনি থাকতেন তাঁর পবিত্র প্রচারনায় এবং অসাম্প্রদায়িক পবিত্র বাণীর প্রভাবে ধীরে ধীরে জনসাধারণ দ্বীন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় লাভ করে এবং সর্বসাধারণ তাকে আজমিরী বাবা বলে অভিহিত করেন।

পরবর্তী সময়ে আজমিরী বাবা কুতুবে রব্বানী আ্উলিয়ায়ে কামিল হযরত শাহ সুফী আলহাজ্ব খাজা হাফিজ সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক চিশতী (র:) এর পবিত্র স্মৃতির স্মরণে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এ উপজেলার নাম আজমিরীগঞ্জ নামকরণ করা হয়। এর আগে আজমিরীগঞ্জের নাম ছিল আমিতাবাদ।

উল্লেখ্য যে, তিনি উফাত গ্রহণ করেন উনার প্রধান ভক্তের বাড়িতে অর্থাৎ আমাদের বাড়িতে এবং তাঁর দাফন করার কথা ছিল আমাদের বাড়ির সামনে পারিবারিক একটি কবরস্হানে। পরে আজমিরীগঞ্জের অসংখ্য ভক্তের অনুরোধে তিনির লাশ শরীফ নগরে আনা হয় এবং অসংখ্য ভক্তের অনুরোধে আজমিরীগঞ্জ থানা অফিস ও শরীফ নগর জামে মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয় l

এ মসজিদের নিকটবর্তী শরীফ নগরে পীর সাহেবের অন্যতম প্রধান ভক্ত ও মুরিদ শরাফত উল্লাহ সাহেবের দেয়া বাড়িতে পরবর্তী বংশধরেরা বাস করে আসছে। তাদের পরবর্তী বংশধরেরা আর তাদের আদি নিবাস কলকাতা ফিরে যাইনি l ঠিক তিনির নামে আজমিরীগঞ্জের নগর গ্রামে ইসহাক (রহঃ) নামে আরেকজন কামিল পীর সাহেব ছিলেন এবং তিনি ছিলেন আমার দাদার আপন খালু এবং উনার কাছে আপন দুই বোনের বিয়ে হয় – ১ম বোন মারা যাওয়ার পর ২য় বোনের বিয়ে হয়l আমার নানা পীরসাহেবের ভক্ত হওয়ায় এবং আমার দাদা উনার খালুর পাশে কবর হোক এই অসিয়ত অনুযায়ী নগর গ্রামে দাফনকার্য সম্পাদন করা হয়l

এছাড়া ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ বরকত (রহঃ) এর মাজার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে রয়েছে l এবার মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গেলে বলা যায় – আজমিরীগঞ্জের বদলপুর অপারেশন ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি একটি বিশাল সাফল্য। বদলপুরে শত্রুসেনারা দাস পার্টির প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা শক্তি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। গুলি ছোড়ার জন্য হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়।

১৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীদের মধ্যে দীর্ঘ আঠারো ঘণ্টার সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে দাস পার্টির কমান্ডার জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম শহীদ হয় l এছাড়া, পাকবাহিনী নির্দোষ ১১ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। উল্লেখ্য যে, জগৎজ্যোতি দাস সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের একজন বড় মাপের ছাত্রনেতা ছিল এবং তার বাড়ি ছিল আজমিরীগঞ্জের জলসুখা গ্রামে l এছাড়া ১১ নম্বর সেক্টরের কম্পানী কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত জনাব ফজলুর রহমান চৌধুরীসহ আরও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন l

আজমিরীগঞ্জের শিক্ষার হার ৩৬%। এখানে ৫৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮ টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১ টি দাখিল মাদ্রাসা, ২ টি কলেজ রয়েছে। সবচেয়ে পুরাতন প্রতিষ্টান হিসেবেখ্যাত ১৮৭৬ সালে জলসুখা কৃষ্ণ গোবিন্দ পাবলিক হাইস্কুল এবং ১৯৩০ সালে আজমিরীগঞ্জ এমালগামেটেড বীরচরণ (এ.বি.সি.) সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় l এছাড়া আজমিরীগঞ্জ সদরে জমিদার কালিবাবুর বাড়ি বর্তমানে উক্ত বাড়িটি আজমিরীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ যেখানে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও চলচিত্রকার হুমায়ুন আহমেদের ঐ অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি ঘেটু গান নিয়ে ”ঘেটুপুত্র কমলা নামক” চলচিত্রটি চিত্রায়িত করেন l

এছাড়া আলহাজ্ব হাফিজ উদ্দিন আপাই মিয়া উনার বাবার নামে মিয়া ধন মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামক একমাত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি উপজেলা সদরে প্রতিষ্টান করেছিলেন l এছাড়া আরও অনেক পুরাতন প্রতিষ্টান আছে l আজমিরীগঞ্জে এর প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ হলো মাছ ও ধান। এ উপজেলায় রয়েছে বৃহৎ ফিশ ইন্ড্রাসট্রিস। এ উপজেলার মানুষ মূলত ধান ও মাছের উপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা অনেকই আমরা জানি না এর একজন ছিল শিক্ষাবিদ সতীশ কুমার রায় সংক্ষেপে এস.কে রায় (১৮৮৮-১৯৬০) আসামের জনশিক্ষা পরিচালক ও ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের রিডার ছিলেন। পরে বেশ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্হের সংখ্যা প্রায় ২০ টি এবং জলসুখা কৃষ্ণ গোবিন্দ হাইস্কুলের প্রতিষ্টাতা যেনি একজন বড় মাপের স্কলার ছিলেন l এছাড়া উক্ত গ্রামে প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব, স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ তৈয়ব আলী সংক্ষেপে টি আলী সাহেব যেনি ১৯৫৭ বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বি.এম.এ) এর সেক্রেটারী ও ১৯৬৯ সালে সভাপতি ছিলেন এবং উনার সুযোগ্য দুটি সন্তান একজন ডাক্তার ও অপরজন এক্সিকিউটিভ সফটওয়্যর ইঞ্জিনিয়ার এবং শিবপাশা গ্রামের পুলিশের আই জি জনাব মুদাব্বির হোসেন চৌধুরীসহ অসংখ্য স্বনামধন্য লোকের জন্ম এ উপজেলাটিতে l এছাড়া দুজন প্রসিদ্ধ প্রভাবশালী উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব হাফিজ উদ্দিন আপাই মিয়া এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বার বার নির্বাচিত জনন্দিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত জনাব আতর আলী চেয়ারম্যান l বিচার সালিশের ক্ষেত্রে এই দুই চেয়ারম্যান অনন্য ছিল।

ভ্রমনপ্রেমীদের বিভিন্ন স্হান পরিদর্শন করার মত এ অঞ্চলের উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে – খাজা শাহ ইছাক চিশতি (রঃ) এর মাজার যা আজমিরী বাবার দরবারশরীফ বা কলকাতা পীরসাহেবের মাজার নামে লোকমুখে সমধিক পরিচিত এবং মাজার সংলগ্ন পুকুরে রয়েছে গজার মাছ , মাজারশরীফটি আজমিরীগঞ্জ থানার পশ্চিম পাশে অবস্থিত । গোপীনাথের আখড়া, জমিদার রাধা গোবিন্দ সহ আরো ১০ জমিদার বাড়ি এবং বর্ষায় স্পিডবোটে বিস্তীর্ণ হাওর পরিদর্শন এবং হাওরের বুক চিড়ে বয়ে চলা বিশাল জলরাশির মধ্যে দিয়ে পীচ রাস্তা যা বর্ষাকালে অসাধারণ সৌন্দর্য ফুটে উঠে l

লেখক:
মোঃ শাহ আলম, সহকারী শিক্ষক (ভৌতবিজ্ঞান)
⛔ কেন্দ্রীয় পাঠাগার সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
⛔ কার্যকরী পরিষদের সদস্য, এমপিওভুক্ত জাতীয়করণ লিয়াজো ফোরাম

Sharing is caring!

 

 

shares