Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
আমার লাশের খবর বন্ধু শুনবে একদিন জানি, কাঁদবে সবাই ফেলবে শুধু দু’নয়নের পানি(৫৫) – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমার লাশের খবর বন্ধু শুনবে একদিন জানি, কাঁদবে সবাই ফেলবে শুধু দু’নয়নের পানি(৫৫)

গোলজার আহমদ হেলাল:

ছাত্র ইউনিয়নের সাথে দ্বিতীয় প্রেম হয়েছিল ১৯৯২ সালে। সেটি বেশীদিন টিকেনি। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কলেজ আঙিনার প্রবেশ দ্বারে যে কোন নবীন শিক্ষার্থীকে বিমোহিত করত। মুষ্টিমেয় গুটিকয়েক তরুণ -তরুণী সে আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, দেখেছি অবিরত। সে সময়ে নবীন ছাত্র- ছাত্রীরা মুক্তির অন্বেষার পথ খুঁজত। সবুজ ক্যাম্পাসে নব-নবীনের গান গাহিয়া রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বাহুতে বল বৃদ্ধির জোর তৎপরতা চালাত। নতুন শিক্ষার্থীদের চোখের ও মনের ভাষা বুঝতে পোড় খাওয়া ছাত্র নেতাদের তেমন বেগ পেতে হত না।

আমরা এম সি কলেজে একাদশ বিজ্ঞান শ্রেণীতে পড়তাম সেরা তিনশো জন। আমার মনে পড়ে আমাদের এক শিক্ষক মেট্রিকুলে‌শন পরীক্ষার জন্য ৪২টি রচনা ইংরেজিতে শিখেছিলেন। এর মধ্যে পরীক্ষায় একটিও আসেনি। সে গল্প তাঁর মুখ থেকে শুনেছি আমরা। এরপর ও তিনি বোর্ড স্টেন্ড করেছিলেন। মানে মেধা তালিকায় স্থান অর্জন করেছেন।

আমি প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষার সময় ১১টি, জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার সময় ১৪টি ও এস এস সি পরীক্ষার সময় ২১ টি রচনা মুখস্থ করেছিলাম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা গদ্য ও পদ্য অর্থাৎ কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ সব কটিই আমার মুখস্থ ছিল। খুব মজা লাগত। পড়তে ভাল লাগত। তাই মুখস্থ করে ফেলতাম এ টু জেড।

আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠার পর পরই লেখালেখি শুরু করি। সে সময় মানে হাই স্কুল জীবনে ৯ টি কবিতা, ৩টি প্রবন্ধ, ২টি ছড়া ও উপন্যাসের মত ১টি রচনা লিখেছিলাম। পত্রিকায় চিঠিপত্র কলামের জন্য ২টি মতামত প্রতিবেদন লিখেছিলাম।

আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার জীবনের লক্ষ্য হতে চাই বিজ্ঞানী, জুনিয়র স্কলারশিপ এর সময়ও আমার জীবনের লক্ষ্য হতে চাই বিজ্ঞানী, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময় আমার জীবনের লক্ষ্য হতে চাই ডাক্তার(মেডিকেল কলেজে পড়ার ইচ্ছা ), কলেজে অধ্যয়নকালীন আমার জীবনের লক্ষ্য হতে চাই ইঞ্জিনিয়ার (বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা ) ও সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানে প্রফেসর এগুলো লিখতাম। অনার্সে অধ্যয়নকালীন মনে হল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অথবা ম্যাজিস্ট্রেট হতে হবে। স্নাতক শেষে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে এসে মনে হল বিচারপতি অথবা এটর্নি এবং সাংবাদিক ও এনজিওতে কাজ করার প্রবল আগ্রহ জন্মাল। সময়ে সময়ে জীবনের লক্ষ্য স্থির করার যে ভেরিয়েন্ট হল তার পেছনে শানে নুযুলও আছে। শেষ কথা এটাই, নিয়তির ঠিকানায় আমাকে যেতে হবে। লাওহে মাহফুজে যা লিখা আছে ঐদিকে ফিরতেই হবে।

একটি কথা বলে রাখি, নব্বই দশকের শেষের দিকে আমরা যারা সাইন্স বা বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করেছি। অংক, জীববিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান সম্পর্কে পড়াশুনা করতাম। সে সময়ে গ্রাম-বাংলার লোকজন সাইন্স শুনলেই বলত, ও ডাক্তরী পড়রায় না নি। অংকের কথা শুনলেই বলত ইঞ্জিনিয়ার অইতায় না নি বা। এর মধ্যে কুনো ব্যঙ কিংবা তেলাপোকার ব্যবচ্ছেদ, নিক্তি দিয়ে ওজন পরিমাপ আর প্রাকটিক্যল খাতা তাদের ধারণাকে আরো পাকাপোক্ত করত। আর বিসিএস মানে লোকজন বলত এসডিও, ম্যাজিস্ট্রেট,সচিব,ডিসি,ইউএনও, জজ ইত্যাদি । তবে কলেজের প্রফেসরকে অনেক বড় করেই দেখা হত।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান তাঁর স্মৃতিচারণ মুলক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, স্রষ্টার সূক্ষ্ম ও নিখুঁত পরিকল্পনা আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান দ্বারা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তিনি তাঁর ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি’ বইতে লিখেছেন, “আমি মাস্টার্সে চার নম্বরের জন্য প্রথম শ্রেনী পাইনি। প্রথম শ্রেনী পেলে যে কোন সরকারী কলেজের শিক্ষক হতে পারতাম। পরবর্তীতে এল এল বি ডিগ্রি অর্জন করি এবং কোর্টে যাওয়া আসা শুরু করি। নিদারুন অর্থ সংকটে, এমন সময় রাজশাহী অথবা খুলনা (যতদুর মনে পড়ে) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সেরেস্তাদার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখি। আমি আবেদন করলাম এবং যথারীতি ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হলাম। জজ সাহেব আমাকে বললেন, আজকের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আপনি উপযুক্ত এবং সবার চেয়ে বেশী নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু, আপনাকে আমরা নিয়োগ দেব না। আপনি বরঞ্চ হাইকোর্টে গিয়ে ল’প্রাকটিস করেন। আমি হতাশ ও ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলাম। অর্থ সংকটকে সঙ্গী করে কোর্টে যাতায়াত শুরু করি। কালক্রমে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও প্রধান উপদেষ্টা (প্রধান মন্ত্রীর মর্যাদায়) হই।এটাই নিয়তি। এটাই ভাগ্য। চার নম্বরে কমে প্রথম শ্রেনী না পাওয়া, জজ আদালতে চাকুরী না হওয়া এর সূক্ষাতিসূক্ষ রহস্য কি আমরা বুঝতে পারি। “

ভারতের রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম পাইলট হতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আট জন পাইলট প্রশিক্ষণার্থী নিবে। তিনি হয়েছেন নবম।পাইলট হতে পারেন নি। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। হয়েছেন বিশ্ববিখ্যত পদার্থবিজ্ঞানী ও ভারতের মত এত বড় রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এটাও নিয়তি।

আমরা অনেক কিছু করতে পারলেও অনেক কিছুই পারি না। সমগ্র পৃথিবীতে ছড়াইয়া ছিটাইয়া যাহা আছে এর নিয়ন্ত্রণ ভার একজনের কাছে। সমুদ্রের তলদেশের অকোষীয় জীব, মৃত্তিকা গহবরের ক্ষুদ্র বালু কণা কিংবা আকাশের প্রদীপ্ত তারা ও বাতাসের জলীয় বাষ্পের ক্ষুদ্রতম কণার সামান্যতম নড়াচড়াও তাঁর ইচ্ছায়ই হয়। নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।

আমাদের এক সহপাঠী জেসমিন আক্তার চৌধুরী চমৎকার করে বলত, তোমরা ছেলেদের চেয়ে আমরা মেয়েরা আল্লাহকে বেশি চিনি। কত সুন্দর এই দুনিয়া। কত সুন্দর এই সৃষ্টি। গাছে ফুল -ফল, নদী ভরা জল সবাই নুয়ে নুয়ে আল্লাহর গুণকীর্তন করছে। আমরা মেয়েরাও করি। এর প্রমাণ আমাদের কোমলতা।

লেখক: গোলজার আহমদ হেলাল (সাংবাদিক, কলামিস্ট)
নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আলোকিত সিলেট
সহ সভাপতি, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব

Sharing is caring!

 

 

shares