নিউজ ডেস্কঃ ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আকাশপথে যাতায়াতের জন্য সিলেট বিভাগের মানুষের একমাত্র মাধ্যম । প্রতিদিন এই বিমানবন্দর দিয়ে হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। বিশেষ করে সিলেটের এ বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল করা হয়। কিন্তু ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রীদের করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য এখনও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু হয়নি।
অথচ করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের দেওয়া ১১ দফা নির্দেশনার ৫ ও ৭ নম্বরে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে, বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, এই নিদের্শনা উপেক্ষিত হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই-তিনদিনের মধ্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়ে যাবে।
এদিকে সিলেটে করোনার সংক্রমণ বাড়ার সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। দু’জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে বিভাগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১৮৬ জনে। আর বিভাগে সংক্রমণের হার ছাড়িয়ে গেছে ১০ শতাংশ! গত ২৪ ঘন্টায় ৮২১ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ জন। শনাক্তের হার ১০.৭২ ভাগ। যা গেল অন্তত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। শনাক্তকৃতদের মধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জনসহ সিলেট জেলার ৭৯ জন রয়েছেন। বাকি ৯ জন হবিগঞ্জের। এতে করোনা সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কেউ করোনাক্রান্ত কিনা, তা এই টেস্টে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে জানা যায়।
ওসমানী বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে কেউ করোনাক্রান্ত তথা পজিটিভ হিসেবে ধরা পড়লে তাকে পাঠানো হবে খাদিমপাড়াস্থ ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে তাকে। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীর যদি টিকা না নেওয়া থাকে এবং তার মধ্যে যদি জ্বর, সর্দি তথা করোনার কোনো উপসর্গ থাকে, তবে তাকেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। আর যাদের দুই ডোজ টিকা নেওয়া আছে, শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে, তারা নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওসমানী বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট পরিচালনার জন্য সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমদ সিরাজুম মুনীরের নেতৃত্বে টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। মুনীর ওসমানী বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য টিমের প্রধান। টেস্টের জন্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় কিটও বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ওসমানী বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য টিমের প্রধান ডা. আহমদ সিরাজুম মুনীর বলেন, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে মাল্টিসেক্টরাল কোঅর্ডিনেশন প্রয়োজন। কারণ, কেউ টেস্টে পজিটিভ হলে তার ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে, ট্রান্সপোর্টেশন কিভাবে করা হবে প্রভৃতি কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল টিম কাজ করছে।
সিলেটের সিভিল ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি আছে টেস্ট শুরু করার। তবে এখানে স্বাস্থ্য বিভাগ, সিভিল এভিয়েশন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন সবার সমন্বয় প্রয়োজন। কারণ, টেস্টে করোনাক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনার বিষয় আছে। যারা দেশে আসছেন, তাদেরকে যে বিমানবন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মুখোমুখি হতে হবে, সেটাও আগেভাগে প্রতিটি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে জানাতে হবে।
তিনি বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য রোববার বিকাল ৩টায় করোনা বিষয়ক জেলা সমন্বয় কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কমিটির সভাপতি। সেখানে সব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে