নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯)। চীনের হুপেই প্রদেশের উহান নগরীতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমে শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলে। আজকাল সংবাদ মাধ্যমের প্রধান নিউজ হচ্ছে করোনা ভাইরাস। কবে নাগাদ সম্পূর্ণরূপে এই মহামারী থেকে সারা বিশ্ব মুক্তি পাবে তা এখনও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। ২০২০ সালের ১১ই মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে একটি বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোও ইংল্যান্ডে এই মহামারী খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম ২৯ শে জানুয়ারী ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস দুইজন চীনা নাগরিকদের মাধ্যমে ধরা পড়ে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সব সিটিতেই প্রাণঘাতী এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ১৭ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৩৩ জন। সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ২৩৯ জন। যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আগের থেকে অনেকটা এখন কমেছে। এজন্য সরকার লকডাউন তুলে দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
তাছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বন্ধ করে দেয়ার সাড়ে ৩ মাস পর যুক্তরাজ্যের মসজিদগুলো গত ৪ জুলাই থেকে সরকারিভাবে খোলে দেওয়া হয়েছে । এ ব্যাপারে সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মসজিদে আসার ক্ষেত্রে মুসল্লিদের কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে যাতে করে কোন কারনে আবারও যেনো ভাইরাস স্প্রেড করতে না পারে।
এছাড়া এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সারা বিশ্বের ন্যায় ব্রিটেনের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হয়েছে । অনেকটা পিছিয়ে পড়া ব্রিটিশ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্রিটিশ সরকার একটি বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে । নতুন পরিকল্পনায় সুবিধা পাচ্ছে হসপিটালিটি সেক্টর। এর ফলে ব্রিটেনের রেস্টুরেন্ট সেক্টর আবারো পুনরুজ্জীবিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এই পরিকল্পানার আওতায় হসপিটালিটি খাতে ভ্যাট কর্তন এবং বেকারত্ব গোছাতে ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্ব ঘোষনা করেছেন ব্রিটিশ চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক । হাউজ অব কমন্সে গত ৮ জুলাই নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন কালে তিনি বলেন, অক্টোবরে ফারলো প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যে সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিন মাস তাদের কর্মীদের কাজে রাখবে, প্রত্যক কর্মীর জন্য সরকার ঐ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এক হাজার পাউন্ড বোনাস প্রদান করবে ।
তাছাড়া ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম পুঁজিঘর হচ্ছে কারী শিল্প। করোনা মহামারির এই সময়ে ব্রিটেনের কারী শিল্প অত্যন্ত সংকটময় সময় পার করছে। অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় এই সেক্টরকেও বাঁচাতে চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক জানিয়েছেন, চলতি মাসের ১৫ জুলাই থেকে আগামী বছরের ১২ জানুরীরির মধ্যে ভ্যাট কমিয়ে ১৫% থেকে ৫% করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৭ই জুলাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণা সময় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া অর্থনীতির গতি ফেরানো সম্ভব না। তিনি ব্রিটেনের অর্থনীতিকে পুনরায় চাঙ্গা করতে কর্মীদের কাজে ফেরার আহবান জানান। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে আমরা ভালো ও সুখবরের আশা করছি। কিন্তু যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরিকল্পনা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগামী ২৫ জুলাই থেকে ইনডোর জিম,পুলসহ অন্যান্য খেলাধুলা পুনরায় শুরুর ঘোষণা দেন। তাছাড়া আগামী মাস থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানের অনুমতি এবং সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল, নার্সারি ও কলেজ খোলার পরিকল্পনা করছে রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
সর্বোপরি মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্রিটিশ সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যায় খুব শিগ্রি না হলেও ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে ব্রিটেনসহ সারাবিশ্ব মুক্তি পাবে। তবে সেই সুদিন ফিরে পেতে আমাদেরকে পরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনটেইনের পাশাপাশি সরকারের দিকনির্দেশনা মনেচলা খুবই জরুরি। সবার সুসাস্হ ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।
লেখক
মু. আব্দুল আলী
সহ- সম্পাদক
ডেইলি সি এন বাংলা।