জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নে মেয়েকে উত্ত্যক্ত এবং ঘর থেকে তুলে নিয়ে কোথায় রেখেছে জানতে চাওয়ায় বৃদ্ধ বাবাকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৫ অক্টোবর) রাতে মেয়েটির বাবা আনোয়ার আলীকে (৬৫) আলীগঞ্জ বাজারের কলোনির ভাড়া বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে একই উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের গোতগাঁও গ্রামের আংগুর মিয়ার ছেলে শামীম ও তার লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার রাজনগর গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে গৃহপরিচারীকার কাজ করতো আনোয়ার আলীর মেয়ে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওই বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় শামীম। তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাত বছর আগে নবীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাজ গ্রামের কবির মিয়ার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। গত দু’বছর হলো কবির মিয়া তার মেয়েকে তালাক
দিয়েছে।
এরপর থেকে ১ ছেলে নিয়ে মেয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছে। তখন থেকে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতো শামীম। সোমবার সন্ধ্যায় শামীমের কাছে মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়ের বাবা আনোয়ার আলীকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ বাজারের নিয়ে চিকিৎসা করায়।
স্থানীয়রা আরো জানান, শামীম এলাকায় বখাটে, সন্ত্রাসী ও মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। চুরি- ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে তার নামে। ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়ের বাবার হাতে, পিঠে ও পায়ে রডের আঘাতের চিহ্ন।
নির্যাতনের কথা স্বীকার করে আনোয়ার আলী বলেন, আলীগঞ্জ এলাকার বাসা থেকে তাকে গুতগাঁও গ্রামের শামীম, লিটন, লিয়াকত ও আক্কাইসহ আরও দুজন ধরে নিয়ে গিয়ে রড দিয়ে পিটিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। তার মেয়ে কোথায় আছে তিনি জানেন না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি জগন্নাথপুর থানা পুলিশের দৃষ্টিতে পরলে থানার অফিসার ইনচার্জ ইফতিয়ার উদ্দীন চৌধুরীর নির্দেশে এসআই আরিফুল, এসআই রফিক, এসআই শিবলু সহ একদল পুলিশ মঙ্গলবার ভোরে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জরিত জনকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত হল: গোতগাঁও গ্রামের ধনাই মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া, মৃত জাহির মিয়ার ছেলে আক্কাই, গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গিয়াস উদ্দিন ও খাঁনপুর গ্রামের মির জাফর খানের ছেলে আলম হোসেন। পরে
থানার এসআই ফিরোজের নেতৃত্বে আরেক দল পুলিশ নবীগঞ্জ থানার অজ্ঞাত নামক স্থান থেকে নিখোঁজ হওয়া মেয়েটিকে উদ্ধার সকাল ১০টার দিকে থানায় নিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। কোন বিষয়ে মারধরের বিষয়টি তিনি জানেন না।
এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোখলিছ মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। ছেলেটা খারাপ। ঘটনা বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ সার্কেল অফিসের এএসপি মাহমুদুল হাসান চৌধুরী জানান, বৃদ্ধা উপর নির্যাতনে ঘটনা জানার পর থানার পুলিশের অভিযানে ৪জনকে আটক করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূল অপরাধি শামিমকে গ্রেফতারর অভিযান অব্যাহত আছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সিএনবাংলা /শোভন