আব্দুল কাদির জীবন: দিন দিন জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী তরুনরা। বিষয়টি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খোদ অভিভাবক মহল। সম্প্রতি দেশে বেশ কয়েকটি অভিযানে ইংলিশ মিডিয়াম সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এক সময় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জঙ্গি ভাবা হলেও এখন অনেকটাই ধারনা বদলে গেছে অনেকের। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত সচেতন মহল থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মনোবিজ্ঞানী ও ধর্মীয় নেতারা মনে করছেন পারিবারিক বন্ধনের অভাব ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অভাবে অনেকেই সে পথে পা বাড়াচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখাযায়, প্রতিশোধপরায়ণতা, ধর্মের অপব্যাখ্যা, নৈতিক ও সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব এ পথে ঝুঁকার অন্যতম কারন বলে জানা যায় দরিদ্রতার কারণে অনেকে আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য এই পথে চলে যায়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বন্ধুদের মধ্যে যদি কেউ ওই মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়, এক্ষেত্রে ওই বন্ধুর বিশেষ প্রভাব তার অন্য বন্ধুদের উপর পড়ে।
অন্যদিকে এই পথে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, সন্তানদের প্রতি পরিবারের সঠিক নজরদারির অভাবকে দায়ী করেন। তারা বলেন, বর্তমান সময়ে পিতামাতা বা পরিবারের সদস্যরা সন্তানদের প্রতি সুষ্ঠো নজরদারি করেন না। সন্তান কোথায় যায় কি করে কার সাথে মিশে এসব বিষয়ে নজরদারি নেই। ফলে তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লেও পিতা মাতার কিছু করার থাকে না।মাঝেমধ্যে দেখা যায়, কৌতূহলবশত হয়ে শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন ম্যাগাজিন বা সাময়িকী পড়ে থাকে। পড়ার পর অনেকে নিজে নিজে এর দিকে ধাবিত হয়।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা যে পরিবেশে থাকে তা যদি জঙ্গিবাদ সমর্থিত হয় তবে তাও বিপথে যাওয়ার একটি কারণ। আবার অনেক সময় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে ধর্মীয় অগ্রবাদের বিভিন্ন বিষয় ঢুকিয়ে দেয়। আর এটা হলো বুদ্ধিভিত্তিক প্রেষণা। তাদের মতে ধর্মের অপব্যাখ্যাও জঙ্গিবাদে জড়ানোর অন্যতম কারন।
জঙ্গি সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের জিহাদ, অমুসলিম হত্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে। ফলে শিক্ষার্থীরা অমুসলিম বা ধর্মের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণকারীদের হত্যা করলেই জান্নাত পাবে এই আশায় জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরতে পারে মনোবিজ্ঞানীরা আরো বলেন, কেউ যদি কোন লিগ্যাল বিষয় থেকে অবদমিত বা বঞ্চিত হয় তখন সে প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য এমন কোন সংগঠন জড়িয়ে পড়তে পারে।
এ বিষয় থেকে উত্তরণের জন্য সচেতন মহল মনে করেন, শিক্ষার্থীরা যাতে এই পথে যেতে না পারে এজন্য প্রথমে পরিবারকেই ভূমিকা রাখতে হবে। ছেলে মেয়েদের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি তাদের নৈতিক ও প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করতে হবে। পরিবার থেকে ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, বাসায় কি করে এসব বিষয় নজরদারি করতে হবে। হঠাৎ করে ছেলেমেয়েদের আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তাও খেয়াল করতে হবে।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী ওয়াক্কাস বলেন, সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারস্পরিক সমপর্কের অভাব, ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত এসব কারনে শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।তাছাড়া আর্থিক সুবিধার বিষয়টিও অন্যতম একটি কারন ।
প্রফেসর ওয়াক্কাস আরো বলেন, পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধই পারে এই পথ থেকে ফিরিয়ে রাখতে ।
সিলেট শাহজালাল ইমাম ফাউন্ডেশন এর সভাপতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান বলেন, কিশোররা এই বয়সে এসব বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠে । এসময় অভিভাবকদের অবহেলার সুযোগে তারা বিচ্ছন্নি হয়ে যায় । পশ্চিমাদের বাড়াবাড়ি এবং ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারনে তারা উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।ধর্মীয় সঠিক অনুসাশনই পারে জঙ্গিবাদ থেকে তরুনদের বিরত রাখতে ।