Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
বাইশ গজের নেতার নিরব বিদায়; কিছু অনন্য রেকর্ড – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাইশ গজের নেতার নিরব বিদায়; কিছু অনন্য রেকর্ড

শেখ রিদওয়ান হোসাইন

আলোচক থেকে সমালোচক, সবার অন্তরেই এক স্তুপ কষ্ট অদ্ভুদভাবে জমে গেছে ক্ষণিকের মধ্যেই। কারণটাও তো অজানা নয়! একজন যোদ্ধা তার অস্ত্র সমর্পিত করে দিয়েছেন চিরতরে। তবে ভালোবাসার স্থান থেকে এই যোদ্ধা ভক্তের হৃদয়ে বেচেঁ থাকবেন চিরকাল।

২০০৪ এর ২৩ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে যার রাজকীয় ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু। তারপর কেটে গেছে ১৬ টি মৌসুম,কতো উত্থান পতনের সাক্ষী হওয়া,নিজের প্রিয় স্টাইলে মাঠের ওপারে বল আছড়েঁ ফেলে দলকে জয় এনে দেওয়া- এমন অনেক হাজারো মূহুর্ত ধোনি উপহার দিয়ে গেছেন না ভুলার স্মৃতি হিসেবে।

দলের স্টাফ থেকে ক্ষুদে ভক্ত,সবার ভালোবাসায় রিক্ত ধোনি পরিচিত ‘মাহি’ নামেই। যেই নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে উইকেটের পিছনে দাড়িয়ে দারুণ মনোযোগ নিয়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া একজন ‘কুল ক্যাপ্টেনের’ কথা। অথবা বিপর্যয়ে থাকা দলকে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস দিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছানো এক নায়ক! জয়ের তরী ভেড়ানোতে যার প্রিয় শট ‘হেলিকপ্টার শট’।

তাকে নিয়ে সাহিত্যেও কম চর্চা হয় না। গান কবিতা ছবিতে ওলটপালট লেগে থাকে এই একটি নামেই! এই নামেই তো রয়েছে দারুণ এক ছন্দ,অসংখ্য জয়ের ব্যাখ্যা,পরাজয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর বিরল মনোবলের গল্প।খারাগপুরের রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাটার সংগ্রাম কিংবা বিশ্বকাপ ফাইনালে জয় পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার শক্তি, সবগুলোই এমন কিছু অণুপ্রেরণা যা সকল প্রজন্মেই বিস্ময়। তার পুরো জীবনটাই একটি চর্চা, যেখানে শুধু সংগ্রামের গল্পই নয়, লিখা আছে কঠিন মনোবল আর সংকল্পের শব্দগুচ্ছ।

বিদায় নিয়েছেন বেশিক্ষণ হয়নি,কিন্তু ক্রিকেট পাড়ায় শোকের মাতমে ইতিমধ্যেই ভরপুর। কোনো ক্রিকেট ফ্যানই হয়তো অবশিষ্ট নেই তার নিরব প্রস্থান শোনার। তার বিদায়ের বার্তা পাওয়া মাত্রই রায়নাও যেনো আর সাতপাঁচ ভাবেন নি! তাকে অনুসরণ করেই নেতার পদাঙ্কতে পা মিলালেন তিনিও!

রাহুল দ্রাবিড়ের একটা ব্যাখ্যাই হয়তো যথেষ্ট তার পুরো ক্যারিয়ারকে এক কথায় প্রকাশ করে দিতে! –
“সে আমাদের এমন কিছুই বলতো না,যা সে নিজে করতো না”।

হ্যাঁ, একজন নেতাকে এর চাইতে ভালোভাবে হয়তো তুলে ধরা সম্ভব নয়। ক্যাপ্টেন্সিতে কতোটা নিখুঁত তা তো তার পরিসংখ্যানই বলে দেয়। তিনিই ক্রিকেট বিশ্বে একমাত্র ক্যাপ্টেন যার অধীনে ৩ টি ভিন্ন আইসিসি ট্রফি জয়ের রেকর্ড লিপিবদ্ধ রয়েছে।

২০০৭ টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ
২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ
২০১৩ আইসিসি ট্রফি

একজন ক্যাপ্টেনের এর চাইতে বেশি কিছু স্বপ্ন হওয়ার নেই অন্তত আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে। তবুও তাকে পরিসংখ্যানে মাপলে ভুলই হবে। কারণ তিনি বিশ্বকাপ জয়ের জন্য দল তৈরিও করেছেন! একটা সময় ভারত দলের যখন ট্রফি খরা চলছিলো,ভাঙাচোরা দল তখন তিনি নিজেই সাজিয়েছেন। অধিনায়কত্ব পেয়ে দলের উপর প্রভাব খাটিয়ে শুনেছেন অনেক কথা,কিন্তু দমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াননি। হেটেঁছেন তিনি,বিশ্ব জয়ের মঞ্চ পর্যন্ত।

বাংলাদেশের প্রায় সকল ক্রিকেটাররা ধোনির বিদায়ে ব্যাথিত হয়ে,তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সামাজিক মাধ্যম গুলোতে স্থিরচিত্র পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা উইকেট কিপার মুশফিকের আইডল এই মাহিই। রিয়াদের অনেক বড় অনুপ্রেরণা। শুধু যে ভক্তের হৃদয়ে আসন গেড়েঁ বসে আছেন ভুল,সতীর্থ থেকে প্রতিপক্ষের কাছে তিনি এক মহানায়ক।

কুল ক্যাপ্টেন্সি, দূরুহ সব ম্যাচ ফিনিশিং বাদেও উনার আরোও বিশেষত্বের জন্য ক্রিকেটে বেচেঁ থাকবেন তিনি,আর সেটা হলো তার উইকেট কিপিংয়ের পারদর্শিতা। বিদ্যূত গতিতে স্টাম্পিং করে,অথবা উল্টো দিকে ঘুরে সরাসরি স্টাম্পে থ্রো, উড়ন্ত হয়ে লুফে নেওয়া ক্যাচ কিংবা অপ্রত্যাশিত ওয়াইড বল পা দিয়ে থামিয়ে দেওয়া, এমন অনেক স্কিল দিয়েও তিনি ম্যাচ জয়ে সাহায্য করতেন।

একনজরে দেখা যাক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩ ফরম্যাটের ছোট্র পরিসংখ্যান ও কিছু মেজর রেকর্ডসমূহ-

টেস্ট পরিসংখ্যান-
ম্যাচ- ৯০
রান- ৪৮৭৬
শতক- ৬
অর্ধশতক – ৩৩
গড়- ৩৮.০৯

ওয়ানডে পরিসংখ্যান-
ম্যাচ- ৩৫০
রান- ১০,৭৭৩
শতক- ১০
অর্ধশতক- ৭৩
গড়- ৫০.৫৩

টি-২০ পরিসংখ্যান-
ম্যাচ- ৯৮
রান- ১৬১৭
শতক- ০০
অর্ধশতক- ০২
গড়- ৩৭.৬০

ধোনি মোট ৩৩২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সি করেছেন যা একটি বিশ্বরেকর্ড। যেখানে রয়েছে ২০০ ওয়ানডে, ৬০ টেস্ট ও ৭২ টি টি-২০ ম্যাচ।

ধোনিই ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্যাপ্টেন যিনি ৩ ফরম্যাটেই ৫০+ ম্যাচ ক্যাপ্টেন্সি করেছেন।

ক্যাপ্টেন ধোনি ৬ বার তার দলকে মাল্টি-ন্যাশন ওডিআই টূর্নামেন্টের ফাইনালে নিয়েছেন,যার মধ্যে ৪ বারই ফাইনাল জিতেছেন যা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ফাইনাল জয়ের রেকর্ড।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক ‘নট আউট’ অর্থ্যাৎ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটিও ধোনির দখলে।মোট ৮৪ ওয়ানডেতে তিনি অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন। যেখানে তিনি মোট ৫১ বার রান তাড়া করে অপরাজিত ছিলেন! সবচেয়ে বিরল রেকর্ডটি হলো,ওই ৫১ বার রান তাড়া করে অপরাজিত থাকার সময় ৪৭ বারই দলকে ম্যাচ জিতিয়েছেন! ২ বার খেলা ড্র হয়েছেন এবং মাত্র ২ টি ম্যাচ হেরেছেন!

ধোনির উইকেট কিপিংয়ে পারদর্শিতার কথা তো আগেই বললাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি স্টাম্পিংয়ের রেকর্ড তার দখলেই। ৩৫০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে করেছেন ১২৩ স্টাম্পিং। ধোনির পিছনে আছেন দুই কিংবদন্তি মার্ক বাউচার ও এ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

সবশেষে এটাই বলবো,ধোনির বিদায় নিয়ে কানাঘুষা চলছে সেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর থেকেই। তবে তিনি সকল বাঁধাকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খেলে গেছেন নিজের ৩৯ বয়স পর্যন্ত! সবকিছু ছাপিয়ে সবার মধ্যমণি ও ক্রিকেটের কিংবদন্তি হয়েই বেচেঁ রবেন বাকি জীবন।

 

 

Sharing is caring!

 

 

shares