আবদুল কাদির জীবনঃ একদিকে করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) অন্যদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সুনামগঞ্জ হাওরবাসী মানুষ। ঈদের আমেজ নিরামিষ! আছেন সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায়।
হাওর পাড়ের মানুষের বন্যার পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। ত্রান নেই বন্যাকবলিতদের। একদিকে করোনায় কর্মহীন অন্যদিকে বন্যা পানি-ভাঙন। দুর্যোগে দুর্বিসহ অবস্থা বন্যা কবলিতদের। বন্যা কবলিতরা কষ্টে থাকলেও ইউপি সদস্য-চেয়ারম্যান তেমন খোঁজ খবর নেয় না। দেয় না কোন সরকারি সহায়তা। সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র সাত-আট কেজি চাল দেয়া হয়েছে।
যা একটি পরিবারের মাত্র তিনদিনের খাবারের ব্যবস্থা হয়। সে চালও অধিকাংশ বন্যা কবলিতদের ঘরে পৌছেনি। পানির মধ্যে থেকে অসুখ হলেও ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। সারারাত সাপ-বিচ্ছুর ভয় নিয়েই অনেকে পানিবন্দী হয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। এ অবস্থায় কোরবানি ঈদের আগমন।
বন্যাকবলিত কর্মহীন এসব মানুষ ঈদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আয় রোজগার না থাকায় ঈদের বাজার করা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে। বন্যা কবলিতরা বলছে, ঈদ আসলেও আমাদের ঘরে কোনো ঈদ নেই। ছেলেমেয়েদেও নতুন জামা-কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। নেই বাজার করার সামর্থ্য।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৬নং পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা আফিয়া খাতুন ডেইলি সি এন বাংলা কে বলেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করতাম। করোনা থেকে বন্যা টানা চারমাস কোন কাজ কর্ম নেই। দুদিন বাদে ঈদ। ছেলেমেয়েকে কোন কিছু কিনে দিতে পারিনি। এমনকি চিনি সেমাই কিভাবে কিনবো সে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আর পানির মধ্যে ঈদ বা করবো কিভাবে?
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সামাজিক সংগঠনের নেতা মোঃ নুরুল আমীন রুহুল তিনি সি এন বাংলা কে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সরকার এবং এলাকার ধনাঢ্য পরিবারের ব্যক্তিরা এই দুর্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং বাড়িঘর হারানো ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সাইজুল জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের বাড়ি। এখন আমাদের একান্তই সাহয্যের প্রয়োজন। যদি কেউ সাহায্য সহযোগিতা করে তবে ঈদের দিনে কিছু একটা খেতে পারবো। আর না দিলে আমাদের কপালে জুটবে না। চারদিকে পানি, কোথাও যেতেও পারি না। কারো কাছে গিয়ে যে বলবো তাও পারি না। কেউ যদি এসে দিয়ে যায় তবে কপালে জোটে না হলে অমনিই থাকতে হয়।
সুনামগন্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জহিরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি সি এন বাংলা কে জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে উপজেলাওয়ারী সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে চাহিদা মোতাবেক মতো ৫৪২ মে.টন জি আর চাল, ২৪,০০০০০ টাকা জি আর ক্যাশ নগদ, ৪০০,০০০ টকা শিশু খাদ্য, ৬০০,০০০ টাকা এবং ৫০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বর্তমানে পানিবন্দি ২২৯৫, এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১,৭৬,৭১২ জন লোক।