Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
স্বাগতম মাহে রামাদ্বান….. এইচ.এম.তৌহিদ – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

স্বাগতম মাহে রামাদ্বান….. এইচ.এম.তৌহিদ

স্বাগতম মাহে রামদ্বান! হিজরি সালের শাবান চান্দ্রমাসের সমাপ্তির পরই প্রতিবছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে অাসে ইবাদতের মাস মাহে রামাদ্বানুল মোবারক । এ তাৎপর্যময় মাসের আগমন সারা বিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুসলমানদের জীবনে সারা বছরের মধ্যে রামাদ্বান মাসে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি। তাই বলা হয়, রামাদ্বান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকর, শোকর তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। মাহে রামাদ্বান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে মোবারকবাদ দিয়ে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রামাদ্বানুল মোবারক এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম)।

মহাল আল্লাহ সুবহানাহু তায়াল পবিত্র কোরানুল কারীমে বলেন-হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো[আল বাকারাঃ আয়াত নং ১৮৩]
রামাদ্বান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম এর মাধ্যমে জীবন যাপন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। সাওম মানুষের অভ্যন্তরীণ
যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রামাদ্বান।

কিভাবে স্বাগতম জানাবো???
১) রামাদান সম্পর্কে জ্ঞান অন্বেষণ করুনঃ এটা আপনাকে রামাদ্বানের ইবাদাতসমূহ সঠিক ও পূর্ণভাবে পালনের নিশ্চয়তা দিবে এবং আপনার মাঝে রামাদ্বানের অনুপ্রেরণামূলক দিক ও কাজগুলো সম্পর্কে এক উম্মাদনার সৃষ্টি করবে। রামাদ্বান সম্পর্কে আপনি যতো বেশি জানবেন ততো বেশি ইবাদাত করে আপনার প্রতিদানকে বহুগুণে বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

২) রামাদ্বানের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুনঃ হতে পারে এটা সম্পূর্ণ কুর’আন খতম দেয়া, নিয়মিত সালাতুত তারাবীর সালাত আদায় করা, বিশেষ করে খতমে তারাবীহ,কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের ইফতারে আমন্ত্রণ করা; প্রথমে এই রামাদ্বানে আপনি কোন ইবাদাতগুলো করতে চান তার একটি তালিকা তৈরি করুন, তারপর পরিকল্পনা করুন সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনার পরিকল্পনাগুলো যেন বাস্তবসম্মত হয় এবং সেগুলো যাতে আপনার স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় কোন ব্যাঘাত না ঘটায় (উদাহরণস্বরূপ, এমন কোন পরিকল্পনা না করা যাতে আপনাকে পুরো এক মাস ছুটি নিতে হয় কিংবা কাজের সময় পরিবর্তন করতে হয়), তাহলে রামাদ্বানের পরেও আপনি এই ইবাদাতগুলো চালিয়ে যেতে পারবেন ইনশা আল্লাহ। এই রামাদ্বানে আপনি কী অর্জন করতে চান তা জানা থাকলে লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে আপনি অবিচল থাকতে পারবেন। রামাদ্বানে প্রতিদিন রাতে পরবর্তী দিনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করুন (চেষ্টা করুন রামাদানের পরেও এই অভ্যাসটি চালিয়ে যেতে)।

৩) নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন হোনঃ রামাদ্বানে কিংবা রামাদ্বানের পরপরই ঘটতে পারে এমন কোন বিষয়ের ব্যাপারে সচেতন হোন। রামাদ্বানের মধ্যে কি আপনার পরীক্ষা আছে? কিংবা রামাদানের পরপরই কোন বিয়ের অনুষ্ঠান? অথবা বাসা বদলানো? যদি এ ধরনের কোন কর্মসূচী থেকে থাকে তবে এখন থেকেই সেগুলোর ব্যাপারে পরিকল্পনা করুন। এখন থেকেই শুরু করুন, তাহলে রামাদান শুরুর আগেই আপনার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। সবকিছু গুছিয়ে নিন এবং রামাদান শুরুর আগে কিংবা পরে বাসা বদলানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, যাতে তা আপনার ইবাদাতের সময় কেড়ে না নেয়। সর্বশেষ আপনার যে কাজটি করার সম্ভাবনা আছে তা হলো রামাদানে শপিং সেন্টারে ঘুরে সময় অপচয় করা। রামাদ্বানের আগে আগেই শপিং সেরে ফেলুন।অন্যথায় আমাদের দেশে দেখা যায় রামাদ্বানের গুরুত্বপূর্ণ শেষ দশকে নামাজ রোজা ইত্যাদি বাদ দিয়ে আমরা শপিং নিয়ে ব্যস্ত হই।সেক্ষেত্রে নামাজ কাজা হবার পাশাপাশি চোখের যিনা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।রাসূলের হাদিস অনুযায়ী যেই ব্যাক্তি রামাদ্বান মাস পেলো,আর জিন্দেগীর গুনাহ মাফ করাতে পারল না,উম্মতের মধ্যে তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই।

৪) আপনার মনকে প্রস্তুত করুনঃ সাওম হচ্ছে আমরা আমাদের মুখের মাধ্যমে যা কিছু গ্রহণ বা বর্জন করি তা থেকে বিরত থাকা। এখন থেকেই সংযমের চেষ্টা করুন, বিশেষ করে আপনার কথোপকথনের ব্যাপারে। পরনিন্দা, পরচর্চা কিংবা সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাকুন।

৫) বদ অভ্যাসগুলোকে বলুন ‘শুভ বিদায়’: নিজের বদ অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করুন এবং রামাদানের জন্য বসে না থেকে এখন থেকেই সেগুলো ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। আপ্পনার যদি ধুমপানের অথবা এলকোহল পানের অভ্যাস থাকে, তবে এখন থেকেই ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করুন।আপনার যদি অতিরিক্ত ঘুমানোর অভ্যাস থাকে, তবে এখন থেকেই ঘুম নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। আপনি যদি অতিরিক্ত ফেসবুক আসক্ত হোন তবে এখন থেকেই ফেসবুক কম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন; টিভি সিরিয়ালের প্রতি দুর্বল? তবে এখন থেকেই দুর্বলতাটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। আমরা সবাই জানি কোন কিছু বলা খুব সহজ কিন্তু করা কঠিন। তবে আপনি যদি একবার শুরু করেন এবং আপনার নিয়াত যদি বিশুদ্ধ থাকে তবে দু’আর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি যতটা কষ্ট হবে ভেবেছিলেন তার চেয়ে অনেক সহজেই আপনার বদ অভ্যাসগুলো ছেড়ে দিতে পারবেন।

৬) নিজের জীবনকে ইবাদাতের উপযোগী করে পরিকল্পনা করুনঃ সালাতের সময় কাজ কিংবা মিটিংয়ের আয়োজন না করে অন্য সময় করুন, যাতে সালাতের জন্য আপনার কিছু সময় বিরতি থাকে। আপনি যেখানে সালাত আদায় করেন সেখানে খুব ইমার্জেন্সী না হলে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং দুনিয়ার কথা ভুলে যান, কারণ সালাতের মাধ্যমে আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াচ্ছেন।

মাহে রামাদ্বান মুসলমানদের জন্য যে সকল কারণে গুরুত্বপূর্ণ ঃ

১. রামাদ্বান হলো কুরআন নাজিলের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: “রামাদ্বান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।” (সূরা বাকারা : ১৮৫) রামাদ্বান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কুরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সা.-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সা.-কে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন এবং রাসূল সা.-ও তাকে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দুই বার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

২. এ মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “রমজান মাস এলে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয় জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০০)

৩. এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল ক্বদরের ন্যায় বরকতময় রজনী : মহান আল্লাহ বলেন, “লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাত্রে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হন প্রত্যেক কাজে, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিময় এ রজনী, ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’’ (সূরা আল ক্বদর : ৩-৫)

৪. এ মাস দোয়া কবুলের মাস : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “(রমজানের) প্রতি দিন ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) আল্লাহর কাছে বহু বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়ে থাকে (যা সে রমজান মাসে করে থাকে)।’’ (সহীহ সনদে ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত, হাদিস নং ৭৪৫০)

৫. রোজার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেন : একটি হাদিসে কুদসিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেন, “বনি আদমের সকল আমল তার জন্য, অবশ্য রোজার কথা আলাদা, কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দেবো।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৫)

৬. রোজা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রামাদান মাসে রোজা রাখবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৯১০)

৭. রোজা জান্নাত লাভের পথ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রাইয়ান’। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না, রোজাদারগণ প্রবেশ করলে এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ১৭৯৭)

৮. সাওম রোজাদারের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: “কিয়ামতের দিন রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির কামনা হতে বাধা দিয়েছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। ’কুরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেইনি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। ফলে এ দুয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’’’ (মুসনাদ, হাদিস নং ৬৬২৬)

৯. রোজা জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তিলাভের ঢাল : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : যে বান্দাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখে আল্লাহ তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)

১০. এ মাসের রোজা রাখা একাধারে বছরের দশ মাস রোজা রাখার সমান : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য, ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান, এ যেন সারা বছরের রোজা।”

১১. রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! রোজাদারের মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)
[এখানে একটা বিষয় জানা দরকার,দাত ব্রাশ না করার কারনে মুখে যেই দূর্গন্ধ হয়ে হাদীসে সেটাকে বুঝানো হয়নি,তাই সেহরির পরে এবং আজানের পূর্বে সকলের দাত ব্রাশ করে নেয়া উচিত ]।

Sharing is caring!

 

 

shares