সরকারের সব মন্ত্রণালয় থেকে ডিজিটালি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে ২ হাজার ২০০টি নতুন ডিজিটাল সেবা শুরু করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
সোমবার তিন দিনের ‘ডিজিটাল মেলা ২০২০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের ই-গভর্নেন্স সূচকে বাংলাদেশকে ১১৫তম অবস্থান থেকে ‘দুই ডিজিটে’ নিয়ে আসতেও আইসিটি বিভাগ কাজ করছে।
এ বিষয়ে পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমি, ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর বিভিন্ন ধরনের সেবা যাতে অনলাইনেই পাওয়া যায় সেজন্য কাজ চলছে।
এক্ষেত্রে আইসিটি বিভাগ ডিজিটাল সেবার প্রক্রিয়া বা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে, বাস্তবায়ন করছে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়।
“বিভিন্ন ধরনের ৬০০ ডিজিটাল সেবা ইতোমধ্যে দেওয়া হচ্ছে। টার্গেট অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে আরও ২২০০ সেবা আমাদের নিয়ে আসার পরিকল্পনায় রয়েছে।”
উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীকালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম চলমান রাখতে ইতোমধ্যে ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিচালয়নার জন্যও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ চলছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি ডিজিটাল সেবায় অনলাইনে সরকারি সেবাপ্রাপ্তি, বিল পরিশোধ ও গ্রামীণ উৎপাদনকারীর পণ্য শহরের ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে ডিজিটাল মিউনিসিপালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম ‘একপে’, ‘একসেবা’ ও ‘একশপ’ চালু রয়েছে।
একসেবা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে ১৬২টি সরকারি সেবা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৩ হাজার সেবা এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশের তথ্য বাতায়নকে তথ্যসেবার প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করা হচ্ছে জানিয়ে ডিজিটাল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পলক বলেন, “এর মাধ্যমে ঘরে বসেই সেবাগ্রহিতার পরিচয় যাচাই, সেবার ইন্টার অপারেবলিটি এবং সেবামূল্য দেওয়ায় ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা নিশ্চিত সম্ভব হবে।”
মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে সচিবালয় পর্যন্ত সবাইকে যে কোনো সেবার পরকল্পনা করার ক্ষেত্রে এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে সেবাগ্রহিতা অনলাইনে চলে আসবে, হয়রানি হবে না এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।”
পলক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের পরামর্শে আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তোলার কারণে মাত্র ১১ বছরে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি এবং ছয়শর বেশি সার্ভিস অনলাইনে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।”
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো ‘ইকোনমিক ডিজিটাল হাব হিসেবে’ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে পলক বলেন, “ইনফো সরকার প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টারে হাইস্পিড ব্রডব্যান্ড কানেকশন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রতি মাসে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেবা গ্রহণ করছে।”
প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা চালুর এই বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতেই ডিজিটাল মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান পলক ।
আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন, এটুআই-এর পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী, বরগুনার জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা এবং ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর ও এটুআই-এর আয়োজনে এবং মাঠপ্রশাসনের সহযোগিতায় রোববার শুরু হওয়া ডিজিটাল মেলা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।
দেশের জেলার পর্যায়ের বিভিন্ন ডিজিটাল কার্যক্রমের টেক্সট/প্রেজেন্টেশন, ছবি, ভিডিও, জেলা ব্র্যান্ডিং এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জাতীয় তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত করার মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে উপস্থাপন করাই এ মেলার মূল উদ্দেশ্য।
(সূত্রঃ বিডি নিউজ)