Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
ইমোতে প্রেম, টাকা হাতিয়ে বিয়ের দিন লাপাত্তা বর – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ইমোতে প্রেম, টাকা হাতিয়ে বিয়ের দিন লাপাত্তা বর

ডেস্ক নিউজঃ  বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন। সাজানো হয়েছে বিয়ে বাড়ি।

বিয়ের গেট ও প্যান্ডেলও হয়ে গেছে। প্রায় তিনশ’ লোকের খাবারের আয়োজন। কিন্তু বরযাত্রী এলো না। বৃথা গেল সব আয়োজন। বধূবেশে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না বাণীর।
রোববার (৩ জানুয়ারি) এ ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের পাচুখারকান্দি গ্রামে।

ভুক্তভেগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাচুখারকান্দি গ্রামের দরিদ্র ভাঙারি ব্যবসায়ী মালেক চৌকিদারের মেয়ে বাণী ওরফে সাথীর (২১) সঙ্গে মোবাইল অ্যাপস ইমোর মাধ্যমে বছর খানেক আগে সোহাগ নামে এক যুবকের (২৫) সঙ্গে পরিচয় হয়।

এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে ওই যুবক মেয়েটিকে জানান যে তার নাম সোহাগ, তিনি রাজশাহী শহরের বাসিন্দা। বাবা বেঁচে নেই। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় চাকরি করছেন।

একপর্যায়ে ওই যুবক বাণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বাণী বিষয়টি তার পরিবারকে জানান। পরে বাণীর পরিবার ওই যুবক ও তার চাচা পরিচয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ আলোচনার পর বিয়েতে মত দেন। গত ৩ জানুয়ারি বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। ৪০ জন বরযাত্রী আসার কথা। এরই মধ্যে ওই যুবক বাণীকে জানান, তার নাকি আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে। বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। তাই বিয়ের খরচের জন্য বাণীর পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন ওই যুবক। বিয়ের আগে টাকা না পেলে নাকি তার বিয়ে করা সম্ভব হবে না। দরিদ্র মালেক চৌকিদার মেয়ের বিয়ের জন্য তার দুই কড়া জমি বিক্রি করেন এবং আরও এক লাখ টাকা ঋণ নেন। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের  মাধ্যমে ওই যুবককে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। বাকি টাকা দিয়ে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করেন। বিয়ের আগের রাত পর্যন্ত বাণী ও তার পরিবারের সঙ্গে ওই যুবকের ফোনে যোগাযোগ ছিলো। বিয়ের দিন সকাল থেকে বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে এবং মেহমানরাও আসতে থাকেন। বরযাত্রী কতদূর, তা জানার জন্য বাণীর পরিবার ওই যুবকের মোবাইল ফোনে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর একাধিক নম্বর দিয়ে বার বার কল করেও কোনো কাজ হয়নি। বরের মোবাইল ফোন বন্ধ জানতে পেরে বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। লোকজনের মধ্যে সন্দেহ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বিয়ে বাড়ির আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে থাকে। থেমে যেতে থাকে বিয়ের আয়োজন ও কোলাহল। দিশেহারা হয়ে পড়ে বাণীর পরিবার। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তাদের সন্দেহই সত্যি হয়েছে। বরবেশে ওই যুবক আসেননি। বাণীরও বধূবেশে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয়নি। মাথায় হাত পড়ে বাণীর বাড়ির সবার। এ ঘটনায় হতবাক হয়ে যান পুরো এলাকার লোকজন।

এ ঘটনা জানতে পেরে মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে বাণীদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাণী তাদের বসতঘরের বারান্দায় নির্বাক বসে আছেন। হাতে মেহেদীর রং। ঘটনার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। লজ্জায় কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছেন না। কারো সঙ্গে তেমন কথাও বলছেন না। নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন। বাড়ির সবাই চুপচাপ, শোকের বাতাস বইছে বাড়িতে। সাংবাদিক দেখে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন এবং বলতে থাকেন এমন ঘটনা এর আগে তারা কখনো দেখেননি-শোনেননি।

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর দারিদ্র্যের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেননি বাণী।
জানতে চাইলে বাণী বলেন, ইমো গ্রুপের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। ও আমাকে বলেছে, ওর বাড়ি রাজশাহী শহরে এবং সে
নাকি নড়িয়া থানায় পুলিশে চাকরি করে। নড়িয়াতে আমি তার সঙ্গে দুইবার দেখা করেছি। সে আমাকে বিয়ে করবে বলেছিল। বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর তার নাকি আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে। এজন্য সে তার বেতনের টাকা তুলতে পারতেছে না। তাই আমাদের কাছে বিয়ের খরচের জন্য এক লাখ টাকা চেয়েছে। আমরা তার কথায় বিশ্বাস করে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি এবং বিয়ের আয়োজন করেছি। কিন্তু সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। এখন আমরা কি করবো বুঝতে পারতেছি না। আমরা অসহায়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এসময় বাণী তার মোবাইলে ওই যুবকের একটি ছবি দেখান। ছবিতে দেখা যায় কোনো এক কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ডের ইউনিফর্ম পড়ে আছেন ওই যুবক। ইউনিফর্মে লেখা আছে সোহাগ ও সিকিউরিটি। ০১৯৫০৯৯২১২৮, ০১৩১৫৩৩৯৬৮৩, ০১৩১৪৯৮৪৯০৯ এসব নম্বরে ওই যুবকের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান বাণী ও তার পরিবার।

মালেক চৌকিদার বলেন, আমি গরিব মানুষ। কেউ লেখাপড়া জানি না। সহায় সম্পত্তি তেমন কিছুই নাই। দিন আনি দিন খাই। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বাণীই সবার বড়। দুই কড়া জমি ছিলো, তাও মেয়ের বিয়ের জন্য বিক্রি করে দিছি। টাকা পয়সা খুইয়ে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারলাম না। আমাদের মানইজ্জত সব গেছে। এখন আমার মেয়ের কী হবে? আমরা কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

মা পারুল বেগম বিলাপ করছে আর বলছেন, আমাদের কী সর্বনাশ হয়ে গেল? এখন আমার মেয়ের কী হবে? সমাজে আমরা মুখ দেখাবো ক্যামনে?

প্রতিবেশী মতিউর রহমান চোকদার, মজিদ ঢালী, কামাল কাজী ও আনিছুর রহমান বলেন, মালেক চৌকিদারের পরিবার নিতান্তই গরিব ও সরল সহজ। কেউ লেখাপড়া জানেন না। সারাদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাঙারি মাল সংগ্রহ ও বিক্রি করে কোনো রকম সংসার চালান। মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেননি। এলাকার লোকজন জানতে পেরে ওই যুবককে টাকা দিতে নিষেধ করেছে। কিন্তু তারা কারো কথা শোনেননি। ওই যুবকের সঠিক পরিচয়ও কেউ জানেন না। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, ওই প্রতারক যুবককে খুঁজে বের করে বিচার করা হোক।

এ বিষয়ে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদার বলেন, বিষয়টি এখনও পর্যন্ত আমাকে কেউ জানায়নি। তাছাড়া ছেলে আমার ইউনিয়নের কেউ না এবং তার কোনো সঠিক ঠিকানা জানা নেই, এখানে আমার কিছু করারও নেই। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, বিয়ের কাবিন বা লিখিত কোনো চুক্তিপত্র না হওয়া পর্যন্ত এখানে আইনগতভাবে কিছুই করার নেই। সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে হবে।

সূত্র:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম /  সিএনবাংলা/ এম

Sharing is caring!

 

 

shares