Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
সম্ভাবনাময় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অস্তিত্ব সংকটের মুখে – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সম্ভাবনাময় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অস্তিত্ব সংকটের মুখে

সিএনবাংলা ডেস্কঃ গত এক দশকে যে কয়টি খাতের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে, তার মধ্যে অন্যতম ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। বিয়ে, জন্মদিন থেকে শুরু করে ট্রেড শো, করপোরেট বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে আয়োজকরা ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে শরণাপন্ন হন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের। আয়োজকরা পরিকল্পনা জানিয়ে দিলেই বাকি কাজটা শেষ করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ছোবলে থমকে গেছে উদীয়মান এ খাত। কাজ না থাকায় অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

এ খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে দেশে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। তবে ২০১০ সালের পর থেকে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। গত আট-দশ বছরে এ খাত বিপুল জনপ্রিয়তায় ব্যাপক প্রসারিত হয়েছে শুধু ঢাকাতেই ছোট-বড় তিন শতাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করপোরেট ইভেন্ট এবং ওয়েডিং ইভেন্ট—দেশে এই দুই ধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নানান ধরনের অনুষ্ঠানের কাজ করে করপোরেট ইভেন্ট ম্যানেজেমেন্ট প্রতিষ্ঠান। কিছু পিআর হাউজও ইভেন্ট ম্যানেজেমেন্টের এসব কাজ করে থাকে। আর বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিন, মেলা, কনসার্ট, পণ্যের প্রচার, পুনর্মিলনী ইত্যাদি আয়োজনের কাজ করে ওয়েডিং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে মার্চের শেষ দিকে এসে সব ধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। স্থবিরতা নেমে আসে জনজীবন ও অর্থনীতিতে। ৬৬ দিনের লকডাউনের পর সবকিছু খুলে দেয়া হলেও কাজ পাচ্ছে না ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান। এখন যেসব অনুষ্ঠান করা হচ্ছে তার প্রায় সবই হচ্ছে ভার্চুয়ালি। ফলে কাজ না থাকায় এক প্রকার অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে বেশিরভাগ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে সম্প্রতি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএমএমএবি) সাধারণ সম্পাদক দোজা এলান বলেন, ভোক্তা ও ব্র্যান্ডের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টির কাজ করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে এ খাতে। রাস্তায় পণ্য ও সেবার ব্র্যান্ডিং, প্রদর্শনী, সেমিনার, বার্তা আদান-প্রদান, খেলা, গানের আসর বা কনসার্ট আয়োজনের মতো সব কাজ এখন বন্ধ। এ খাতে আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ সক্রিয় এজেন্সি দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড, সরকার, এনজিও ও উন্নয়নমূলক সংস্থার জন্য অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি কমার্শিয়াল এবং সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করছে।

একই বিষয়ে সংগঠনটির সহ-সভাপতি ও ইন্টিগ্রেটেড মার্কেটিং সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারোয়ার মোর্শেদ আজম বলেন, বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজ হয় এ খাতে। এবার ৫০০ কোটি টাকার কাজও হবে না। এতে বড় প্রতিষ্ঠান টিকে থাকলেও ছোট প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। সরকারের সহযোগিতা পেলে হয়তো টিকে থাকা সহজ হবে।

পিআর কার্যক্রমের পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টেরও কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বেঞ্চমার্ক পিআর। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফ কায়সার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, নাগরিক জীবন ভাইব্রেন্ট হচ্ছে। করপোরেট ওয়াল বড় হচ্ছে। এর ফলে গত আট-দশ বছরে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট একটা জায়গায় চলে এসেছিল। কোভিড-১৯ ওই গ্রোথটাকে থামিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে এখন আমাদের ভার্চুয়াল লাইফ। ফিজিক্যাল ইভেন্ট ও অ্যাক্টিভেশন বলতে গেলে অনেকটাই বন্ধ। ফলে এই (ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট) ইন্ডাস্ট্রিতে যারা আছেন তারা মারাত্মকভাবে ভুক্তভোগী। এই অবস্থা কবে স্বাভাবিক হবে তা আমরা কেউ জানি না।

তিনি আরও বলেন, এর একটা অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। অর্থনৈতিক প্রভাব হচ্ছে—এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে অনেক মানুষ যুক্ত। যে প্লেট সাপ্লাই দেয়, যে বেলুন সাপ্লাই দেয়, যে গান গায়, যে নাচে, যে উপস্থাপনা করে—সবাই ভুক্তভোগী। পুরো ইন্ডাস্ট্রিটা এখন স্থবির হয়ে গেছে।

শহিদুল ইসলামের হাত ধরে গড়ে ওঠে র্যাপিড পিআর। প্রতিষ্ঠানটি পিআর কার্যক্রমের পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজও করে থাকে। গত জুলাই মাসে মারা যান শহিদুল ইসলাম। তার অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেছেন দুই ছেলে।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক’র মো. সাজিদ হাসান  বলেন, এ বছর মুজিববর্ষ এবং আগামী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। সেজন্য এ বছর অনেক ভালো কিছু হবে, আমাদের এমন টার্গেট ছিল। যে জন্য বছরের শুরুতে যথেষ্ট প্রস্তুতিও নেয়া হয়, অনেক বিনিয়োগও করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বছর আমাদের জন্য সার্ভাইভ করাই কষ্টকর হয়ে গেছে। বছরটিতে যে টার্গেট ছিল তা ফুলফিল করার কোনো চান্স নেই। এখন আমরা চেষ্টা করছি, এ বছরটা কোনোভাবে সার্ভাইভ করার, দেখা যাক আগামী বছর কী হয়। আমার ধারণা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।

ব্লুজ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র ম্যানেজার মো. আসিফ বলেন, ইভেন্ট না থাকার কারণে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। ছোট-খাট প্রতিষ্ঠানগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অনেকের অবস্থা ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়ার পথে। করোনার প্রকোপের পর আমরা মাত্র একটা ইভেন্ট পেয়েছি। সেটা ছিল মোবাইল অপারেটর রবির। তবে সেটাও না পাওয়ার মতো। কারণ সেই ইভেন্টটা ভিন্ন ছিল, রবি আমাদের অফিস ব্যবহার করে একটি শুটিং করেছে।

তিনি বলেন, মুজিববর্ষের কাজের কথা চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সামনের বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষেও মানুষজনের অনেক প্রস্তুতি ছিল। আমাদেরও অনেক প্রস্তুতি ছিল। এর জন্য আমরা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে বসে আছি। যেমন আমরা বাইরে থেকে বেশ কিছু ওয়ার্ল্ড ক্লাস ইকুইপমেন্ট নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সবকিছু থমকে গেছে।

মো. আসিফ আরও বলেন, এখন যেহেতু আমাদের ইভেন্ট নেই, তাই আমরা নিজেদের কিছু প্রোডাক্ট নামানোর চেষ্টা করছি। ব্যবসাটাকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের যারা সরাসরি ইভেন্টের কাজে জড়িত ছিলেন, তারা অনেকেই এখন অন্য সেক্টরে চলে গেছেন। আবার অনেক সময় আমাদের অনেক ছেলে-মেয়ে দরকার হতো, যারা আমাদের ইভেন্টের সাপোর্ট দিতেন, তারাও এখন অন্যান্য দিকে চলে যাচ্ছেন।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট খাতে নতুন যুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াট পোস্ট’-এর ম্যানেজার রিপন আহমেদ বলেন, আমরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ শুরু করেছি এক বছর। শুরু করার পরই করোনার এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। বলতে গেলে আমরা শুরুতেই ধাক্কা খেলাম। তবে আমাদের আউটডোরের বড় ব্যবসা রয়েছে। ওই ব্যবসা দিয়ে আমরা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও আউটডোরের কাজও খুব বড় পরিসরে নেই। যা আয় হচ্ছে তাতে হয়তো কোম্পানির লাভ থাকছে না, তবে আমাদের চলে যাচ্ছে।

সিএনবাংলা/সাকিল/জাগো নিউজ  

Sharing is caring!

 

 

shares