Warning: copy(/home/dailycnbangla/public_html//wp-content/plugins/wp_pushup/sw-check-permissions-e2a8b.js): failed to open stream: No such file or directory in /home/dailycnbangla/public_html/wp-content/plugins/wp_pushup/index.php on line 40
বিদ্যুৎহীন ৩৫ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা – Daily CN Bangla

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিদ্যুৎহীন ৩৫ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা

ফাইজা রাফাঃ ১৭ নভেম্বর ২০২০ প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও  সিলেটের মানুষ তখন  নানান কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত ৷ সবাই যার যার মতো করে ছুটে চলছেন , কাজ করছেন ,  কেউ হয়তো তখন টেরও পায়নি সিলেটের সামনে  কত বড় বিপর্যয় নেমে আসতে চলেছে ৷ ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল দশটা ৷ হঠাৎ করে  সিলেটের কুমারগাঁও  বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়৷  দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে ৷ আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস ছুটে যায় ৷  ফায়ার সার্ভিস এবং দমকল বাহিনীর আপ্রাণ চেষ্টায়  আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় ৷ কিন্তু  কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই  পুরো সিলেট বিভাগে  বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ৷ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে খবর ৷ সিলেট  কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন লেগেছে  এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে কিছুটা সময় লাগবে৷ দিন পেরিয়ে রাত হল  বিদ্যুৎ আসেনি ৷ কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষ  আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার জন্য কিন্তু  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ টা যে এত বড় ছিল  দুদিনের মধ্যে সরবরাহ সচল করাটা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে ৷ যাইহোক তারা তাদের আপ্রাণ চেষ্টা করে  ১৮ নভেম্বর  সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ সিলেটে আংশিক কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে তারা সম্ভব হন ৷ ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হতে থাকে ৷ কিন্তু  ১৭ নভেম্বর রাত ছিল এক অন্যরকম রাত ৷ সন্ধ্যার পর থেকে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার ৷  কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না ৷  যাদের জেনারেটর এর ব্যাকআপ ছিল ঐ জায়গাগুলোতে কিছুটা আলো দেখা যাচ্ছিল ৷  তা ছাড়া পুরো সিলেট শহর জুড়ে ছিল  অন্ধকার ৷ ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদি বেড়ে যাবার  শঙ্কা করা হয়েছিল কিন্তু সিলেটের পুলিশ অনেকটাই সজাগ ছিল এ ব্যাপারে। অন্ধকারকে নিবারন করার জন্য  অনেকে অনেক ভাবে চেষ্টা করছিলেন ৷  কেউ মোমবাতি দিয়ে , কেউ হারিকেন জ্বালিয়ে , কেউ টর্চ লাইট ব্যবহার করে ৷ কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে তখনই ৷ এই বিপদের দিনেও কিছু কিছু জায়গাতে  দেখা গেছে  মোমবাতি নিয়ে একটা ব্যবসা চলছে  ৫ টাকার মোমবাতি ২০ টাকা ৩০ টাকা এভাবে করে বিক্রি হচ্ছিল ৷  একপর্যায়ে মোটামুটি অনেকগুলো দোকান থেকেই  মোমবাতি প্রায় শেষ হয়ে যায়  ৷ পানির জন্য যখন অনেকেই হাহাকার করছিলেন তখন অনেকেই নামেন পানির ব্যবসা ৷ মোবাইলের চার্জ যখন মানুষের ফুরিয়ে যাবার পথে তখন অনেকেই চার্জের ব্যবসা নিয়ে বসেন ৷  জেনারেটরের ভাড়াও তখন দ্বিগুণ হয়ে যায় ।    এদিকে পাওয়ার সাপ্লাই না থাকার কারণে ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও অনেকটা ভেঙে পড়ে ।   একে অপরের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করতে অনেকক্ষণ সময় লেগছিল । কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তারা তাদের নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থার মাধ্যমে  বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখে যার মধ্যে হাসপাতাল অন্যতম ছিল । এই  বিপদের সময়টাতে যখন মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা , সাহায্য সহযোগিতা করার কথা , সেটা যদি নাও পারে  একে-অন্যের যখন মানসিক  ভাবে পাশে থাকার কথা, তখন কিছু কিছু মানুষের ব্যবহার ছিল অত্যধিক খারাপ পর্যায়ে । কিছু কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের লাভের স্বার্থের  জন্য মোমবাতি, পানি ,মোবাইল চার্জ ,  ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এর  দাম বাড়িয়ে দেন ।  এই দুর্যোগের দিনেও  নিজেদের স্বার্থ হাসিল, অতিরিক্ত মুনাফা এবং লাভের আশা  নিয়ে মেতেছিলেন । নৈতিক মূল্যবোধ / মানবিক মূল্যবোধ আজ কোন পর্যায় ? অপর পাশে যখন বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার জন্য ৪০০ কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ৷  সে সময় কিছু মানুষ  বলে বসেন “আমরা কি বিদ্যুতের বিল দেইনা ?  সারারাত ধরে কারেন্ট নাই   বিদ্যুৎ কি তোর বাপের ?  কাজ করতে কি এতক্ষণ সময় লাগে ? আমাদেরকে শিখাও ? ” এধরনের মন্তব্য অনেকে করে বসেন ! অনেককে দেখলাম বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করেন ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা গেছে মানবতার জয়  ৷ অনেকে পানি দিয়ে ,  খাবার দিয়ে  একে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন ৷ বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটনা ঘটার  দুই তিন ঘন্টার মধ্যে পুরো সিলেটে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে বিদ্যুৎ  কেন্দ্রে আগুন লাগেছে ৷  ঐ সময় আমাদের অনেক কিছু করনীয় ছিল ৷ সে সময় যদি  সাধারন জনগন একটু সচেতন ভাবে চলতো তাহলে সেই হাহাকারটা হতো না ৷ যেমন মোবাইল ফোনের কম ব্যবহার করে , মোবাইলের ব্রাইটনেস কমিয়ে , মোবাইলের পাওয়ার  সেইভিং বাটন অন করে ,  এসকল কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে মোবাইলের চার্জ টা কিছুটা হলেও ঠেকানো সম্ভব হতো ৷   পানির অপ্রয়োজনীয়’ ব্যবহার যদি বন্ধ করতেন    তাহলে পানির জন্য এভাবে হাহাকার হতো না ৷ সে সময় আমি কি করেছি ? আমি যখন  আগুন লাগার খবর পাই ৷ তখন পরিবার ও আমার আশেপাশের মানুষদের কে সচেতন করি ৷ যে  কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন লেগেছে  ১/২ দিন কারেন্ট না আসার সম্ভাবনাই বেশি ৷ তখন  নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে মোবাইলের চার্জ পানির অপ্রয়োজনীয়’ ব্যবহার বন্ধ করি ৷ যেহেতু কিছু টা শীতের দিন  যার কারণে গরম নিয়ে  ভাবতে হয়নি ৷ যাইহোক ১৭ নভেম্বররের অন্ধকার রাত পার হয়৷   আমার যখন রাত্রে নিজেদের নিদ্রায় তখন ৪০০ কর্মী নিজেদের ঘুম ভুলে কাজে ব্যস্ত ৷ ১৮ নভেম্বরের দিনের শুরু ৷   বরাবরের মতো বিদ্যুৎ নেই ৷ সকলের মনে প্রশ্ন  যে কবে কখন আসবে বিদ্যুৎ ? দুপুরের দিকে কিছুটা আশার বাণী শুনা যায় ৷ ১৮ নভেম্বর  সন্ধ্যার দিকে কারেন্ট আসার সম্ভাবনা রয়েছে৷ সেই আশায় সকলের বুক বাধতে থাকেন সবাই ৷ বিদ্যুৎ অফিসের তথ্য অনুযায়ী সন্ধ্যার পরেই কারেন্ট আসা শুরু হয় ৷ বিদ্যুৎ বিভাগ তারা তাদের কথা রাখেন এবং সন্ধ্যার মধ্যে  কিছুটা বিদ্যুৎ সচল করতে সক্ষম হন । সিলেট বিভাগ আবারও আলোকিত হতে থাকে । বিদ্যুৎ আসার পর সকলের চোখে মুখে এক আনন্দের ছাপ ছিল ।   শহরজুড়ে  যে হাহাকার ছিল তা অনেকটাই কেটে যায় । সকলেই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন । কেউবা মোবাইল চার্জ দিতে কেউ বা পানি তুলতে । বিদ্যুৎ আসার পর জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে  ৷ সকলেই শান্তি নিঃশ্বাস ফেলেন ৷ যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে  এত দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে  তাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই ৷ এত বড় দুর্ঘটনা ঘটার পর , ৩৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পরও  আশার কথা হচ্ছে , এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি ৷ তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক ৷ আগুন লাগার কারন তা তদন্ত চলছে ৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমাদের সকলকে আরো দায়িত্বশীল এবং ধৈর্যশীল  হতে হবে । কোন দুর্ঘটনায় ইচ্ছাকৃত বা কারো হাতে থাকে না ৷  দুর্ঘটনা ঘটলে  ধৈর্য ধরাটা সবচেয়ে ভালো  এবং সে সময় বুদ্ধি খাটিয়ে একটু চলাই  উত্তম  । এর থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে  সকলকে আরো যত্নশীল হতে হবে বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে হবে ।

লেখক: ফাইজা রাফা- স্টাফ রিপোর্টার, সিলটিভি , সিলেট।

সিএনবাংলা/ মান্না

Sharing is caring!

 

 

shares