সিএনবাংলা ডেস্কঃ ঋণের চেয়ে আমানতের সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান বেড়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ এবং আমানতের সুদ হারের ব্যবধান বেড়ে সেপ্টেম্বরের শেষে প্রায় ৩ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে, যা আগস্ট মাসে ছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
মার্চ মাসে ঋণ ও আমানতের সুদ হারের ব্যবধান ছিল ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। যা আগস্ট মাসেও ছিল ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ । অপর দিকে সেপ্টেম্বরে ঋণের সুদহার নেমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।
ব্যাংকারদের মতে, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার ক্রমাগত কমিয়ে দেওয়ার কারণে বিদ্যমান ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধানের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা আগামী মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে।
বিষয়টি তারা ব্যাখ্যা করে বলেন, স্বল্প সুদে তহবিল প্রাপ্যতা ব্যাংকগুলোকে তাদের আমানতের সুদের হার কমাতে চাপ দেওয়ার ফলে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে।
মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের উচ্চ প্রবাহকে তৈরি করেছে।
অপর দিকে সার্বিকভাবে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি রয়েছে। আগস্ট শেষে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন টাকা। আগের মাস জুলাইয়ে ছিল ১ দশমিক ৪১ ট্রিলিয়ন টাকা।
এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকার কারণে আগামী মাসগুলোতে ঋণের সুদহার আরও কমবে। ”
বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমাদের অতিরিক্ত তারল্য বিনিয়োগ করার জন্য ভালো গ্রহিতাদের মধ্যে ৯ শতাংশের কম সুদে ঋণ বিতরণ করার প্রস্তাব দিচ্ছি। ”
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, “বাজারে কম খরচে পর্যাপ্ত তহবিল থাকার কারণে আগামীতে শুধু ঋণ নয়, আমানতের সুদহারও কমবে। ”তবে দেশের প্রবীণ ব্যাংকাররা বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে সুদ হারের ব্যবধান বাড়তে পারে।
সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের সুদহারের গড় ব্যবধান ছিল ২ দশমিক ০৯ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবধান ৩ দশমিক ০১ শতাংশ, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ব্যবধান ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর সুদহারের ব্যবধান ছিল ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোতে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান এপ্রিল শেষে ২ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। মার্চ মাসেও এই ব্যবধান ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ ছিল।
সিএনবাংলা/সাকিল